header ads

চিঠি বিলি রোকনুজ্জামান খান

চিঠি বিলি 
রোকনুজ্জামান খান


ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে
চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া
ছুটছে খেয়া ধরতে।
একটি ব্যাঙ মাথায় ছাতা দিয়ে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বের হয়েছে। তখন আকাশ থেকে টাপুর টুপুর শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে নদী পার হওয়ার জন্য খেয়া নৌকা ধরার জন্য ছুটে চলেছে।

খেয়ানায়ের মাঝি হলো
চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে
জবর মাঝি সাচ্চা।
নদীর খেয়া নৌকাটির মাঝি হলো একটি ছোট্ট চিংড়ি মাছের বাচ্চা। সে চোখ বন্ধ করে নৌকার হাল ধরে আছে। সে আকারে ছোট হলেও নৌকা চালাতে সে খুবই দক্ষ এবং পাকা একজন মাঝি।

তার চিঠিও এসেছে আজ
লিখছে বিলের খলসে,
সাঁঝের বেলার রোদে নাকি
চোখ গেছে তার ঝলসে।
এই চিংড়ি মাঝির কাছেও আজ একটা চিঠি এসেছে। চিঠিটা লিখেছে বিলের খলসে মাছ। সেই চিঠিতে খলসে মাছ লিখেছে যে, সন্ধ্যার সময় হঠাৎ ওঠা কড়া রোদের কারণে তার চোখ ঝলসে গেছে, অর্থাৎ সে ঠিকমতো তাকাতে পারছে না।

নদীর ওপার গিয়ে ব্যাঙা
শুধায় সবায়: ভাইরে,
ভেটকি মাছের নাতনি নাকি
গেছে দেশের বাইরে?
ব্যাঙটি নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ভাইসব, তোমরা কি জানো, ভেটকি মাছের নাতনি কি দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে গেছে?’


তার যে চিঠি এসেছে আজ
লিখছে বিলের কাতলা:
এবার সারা দেশটি জুড়ে
নামবে দারুণ বাদলা।
ভেটকি মাছের নাতনির জন্যও একটি চিঠি এসেছে। সেই চিঠিটি লিখেছে বিলের কাতলা মাছ। চিঠিতে কাতলা মাছ একটি জরুরি খবর জানিয়েছে যে, এই বছর সারা দেশে খুব ভারী ও একটানা বৃষ্টি হবে।

তাই তো নিলাম ছাতা কিনে
আসুক এবার বর্ষা,
চিংড়ি মাঝির খেয়া না আর
ছাতাই আমার ভরসা।
এই ভয়ানক বৃষ্টির খবর পেয়েই ব্যাঙটি নিজের জন্য একটি নতুন ছাতা কিনে নিয়েছে। সে ভাবছে, এখন যতই বর্ষা আসুক, তার আর চিন্তা নেই। চিংড়ি মাঝির ছোট খেয়া নৌকা আর এই ছাতাই এখন বৃষ্টির হাত থেকে তাকে বাঁচাবে।



কবিতাটির বিষয়বস্তু

রোকনুজ্জামান খান রচিত 'চিঠি বিলি' কবিতাটি মূলত একটি অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ এবং মিষ্টি ছন্দের ছড়া, যেখানে জলজ প্রাণীদের একটি ব্যস্ত ও মানবিক জগৎ তুলে ধরা হয়েছে। এর মূল চরিত্র একটি ব্যাঙ, যে পেশায় একজন পোস্টম্যান বা চিঠি বিলিকারী এবং বৃষ্টির এক দিনে সে ছাতা মাথায় দিয়ে বিভিন্ন চিঠি পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজে বের হয়েছে। নদী পার হওয়ার জন্য তাকে একটি খেয়া নৌকায় উঠতে হয়, যার মাঝি হলো এক চিংড়ি মাছের বাচ্চা, যেটিকে দেখে খুব একটা ভরসা করা যায় না। এই কবিতায় বিভিন্ন মাছেরা একে অপরকে চিঠি লিখে নিজেদের খবর জানাচ্ছে; যেমন—খলসে মাছের রোদে চোখ ঝলসে যাওয়ার খবর, কিংবা কাতলা মাছের পক্ষ থেকে ভেটকি মাছের নাতনিকে আসন্ন ভারী বর্ষার সতর্কবার্তা পাঠানো। এই ভারী বর্ষার খবরটিই ব্যাঙকে চিন্তায় ফেলে দেয় এবং এই খবর পেয়ে ব্যাঙ নিজের সুরক্ষার জন্য একটি ছাতা কিনে নেয় এবং বর্ষার জন্য চিংড়ি মাঝির খেয়া নৌকা ও নিজের ছাতার ওপর ভরসা রাখে। সে বুঝতে পারে যে, চিংড়ি মাঝির ছোট খেয়া নৌকা আর ছাতা দিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। ফলে, সে নিজের সুরক্ষার জন্য একটি ছাতা কিনে নেয়, যা তার আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠে। সুতরাং, এই ছড়াটি কেবল একটি মজার গল্পই নয়, বরং এটি শিশুদের কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয় এবং শেখায় যে, বিপদের পূর্বাভাস পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।


চিঠি বিলি
রোকনুজ্জামান খান


ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে
চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া
ছুটছে খেয়া ধরতে।

খেয়ানায়ের মাঝি হলো
চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে
জবর মাঝি সাচ্চা।

তার চিঠিও এসেছে আজ
লিখছে বিলের খলসে,
সাঁঝের বেলার রোদে নাকি
চোখ গেছে তার ঝলসে।

নদীর ওপার গিয়ে ব্যাঙা
শুধায় সবায়: ভাইরে,
ভেটকি মাছের নাতনি নাকি
গেছে দেশের বাইরে?

তার যে চিঠি এসেছে আজ
লিখছে বিলের কাতলা:
এবার সারা দেশটি জুড়ে
নামবে দারুণ বাদলা।

তাই তো নিলাম ছাতা কিনে
আসুক এবার বর্ষা,
চিংড়ি মাঝির খেয়া না আর
ছাতাই আমার ভরসা।

শব্দার্থ ও টীকা
শব্দ অর্থ
কাতলা মাছের নাম।
খলসে মাছের নাম।
খেয়া নদী পার হওয়ার নৌকা।
খেয়া না খেয়া নৌকা।
খেয়ানায়ের মাঝি খেয়া নৌকার মাঝি।
চিঠি পত্র; খবর বা কুশলাদি জানিয়ে কাউকে লেখা।
চিঠি বিলি করা চিঠি পৌঁছে দেওয়া।
ঝলসানো উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধানো।
টাপুস টুপুস বৃষ্টি পড়ার শব্দ।
দেয়া মেঘ।
বাদলা একনাগাড়ে বৃষ্টি।
ভরসা নির্ভর করা, অবলম্বন।
ভেটকি মাছের নাম।
সাঁঝের বেলা সন্ধ্যার সময়।
সাচ্চা সত্য।


পাঠের উদ্দেশ্য: 
ছড়া ও ছন্দের মাধ্যমে কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করা।


পাঠ-পরিচিতি: 
রোকনুজ্জামান খানের 'হাট্ টিমা টিম' বই থেকে ছড়াটি সংকলন করা হয়েছে। এ ছড়ায় ছন্দে ছন্দে মজার একটি গল্প পরিবেশিত হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে, চিঠি বিলি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে একটি ব্যাঙ। কিন্তু বাইরে টাপুস টুপুস করে বৃষ্টি ঝরছে। ব্যাঙটিকে খেয়া নৌকায় নদী পাড়ি দিতে হবে। নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করছে চিংড়ি মাছের বাচ্চা। তাকে চিঠি লিখেছে বিলের খলসে মাছ। খলসে লিখেছে, সন্ধ্যাবেলার রোদে তার চোখ ঝলসে গিয়েছে। ওদিকে ভেটকি মাছের নাতনির কাছে চিঠি লিখেছে বিলের কাতলা মাছ। চিঠিতে কাতলা জানিয়েছে, সারা দেশ জুড়ে এ বছর খুব বৃষ্টি হবে। এই ভয়ে ব্যাঙ একটি ছাতা কিনে নিয়েছে। কারণ চিংড়ি মাঝির খেয়া নৌকার ওপর ব্যাঙের কোনো ভরসা নেই। ছড়াটির মাধ্যমে রোকনুজ্জামান খান আমাদের কল্পনাকে নিয়ে যান জলজ প্রাণীদের জগতে। সেখানে আমরা অদ্ভুত সব ঘটনার মুখোমুখি হই। ব্যাঙের চিঠি বিলি করা, ছাতা কেনা, চিংড়ি মাছের নৌকার মাঝি হওয়া কিংবা মাছেদের চিঠি লেখা বাস্তবে অসম্ভব ঘটনা। কিন্তু সব ঘটনাকেই আমরা কল্পনা করে নিতে পারি। কেননা মানুষের কল্পনা অসীম। ছড়া, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে কবি-লেখকেরা মানুষের জীবনছবি আঁকার পাশাপাশি মানুষের অদ্ভুত ও অসম্ভব কল্পনাকেও আঁকতে পারেন।

কবি-পরিচিতি: 
রোকনুজ্জামান খান ১৯২৫ সালে রাজবাড়ি জেলার পাংশায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন শিশু সাহিত্যিক। সাংবাদিক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। 'দাদাভাই' ছদ্মনামে তিনি পত্রিকায় শিশুদের জন্য বিশেষ পাতা সম্পাদনা করতেন। এ নামেই রোকনুজ্জামান খান বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ বই 'হাট্ টিমা টিম' (১৯৬২), 'খোকন খোকন ডাক পাড়ি'। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকার নাম 'কচি ও কাঁচা'। রোকনুজ্জামান খান 'কচি-কাঁচার মেলা' নামে একটি শিশু-কিশোর সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ম-অনুশীলন
১. এ কবিতায় যেসব প্রাকৃতিক উপাদানের নাম আছে, তার প্রতিটির এক বাক্যের পরিচয়সহ তালিকা প্রস্তুত করো (দলগত কাজ)।
২. কোনো মজার ঘটনা বর্ণনা করে বন্ধুকে চিঠি লেখো (একক কাজ)।

অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. দেশের বাইরে গেছে কে?
ক. চিংড়ি মাছের বাচ্চা
খ. ভেটকি মাছের নাতনি
গ. বিলের কাতলা
ঘ. বিলের খলসে
২. ব্যাঙ ছাতা কিনে নিয়েছিলো কেন?
ক. কাতলা মাছের চিঠি পড়ে
খ. বর্ষা থেকে বাঁচতে
গ. চিংড়ি মাঝির খেয়ায় না উঠতে
ঘ. ছাতা সুন্দর দেখে

উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
রফিক স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায় সময় সহপাঠী অমিতের বাইসাইকেলের পেছনের সিটে বসার আবদার করে। অমিতও তাকে না করতে পারে না। কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পর রফিক অমিতের অনাগ্রহ ও বিরক্তি বুঝতে পারে। সে এটাও জানতে পারে যে, একদিন অমিত তাকে সাইকেল থেকে ফেলে দেবে। এ অবস্থায় রফিক নিজেই একটা সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুলে যেতে সে আর সহপাঠীর সাইকেলের উপর নির্ভর করে না।

৩. উদ্দীপকের রফিক চরিত্রটি 'চিঠি বিলি' ছড়ায় কোন চরিত্রটির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
ক. চিংড়ি মাঝি
খ. ভেটকি মাছ
গ. কাতলা মাছ
ঘ. ব্যাঙ

৪. উদ্দীপকে রফিকের সাইকেল কেনার সঙ্গে 'চিঠি বিলি' ছড়ার মিল রয়েছে-
i. চিংড়ি মাঝির হাল ধরার
ii. ব্যাঙের ছাতা কেনার
iii. ব্যাঙের খেয়া নায়ের উপর ভরসা না করার

নিচের কোনটি সঠিক
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন
১. সামির এলাকায় খুব পরিচিত একজন ছেলে। সে প্রতিদিন এলাকার গৃহস্থ বাড়ি থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে। এ কাজের মাধ্যমে উপার্জিত আয় দিয়ে তার সংসার চলে। দুধ নিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় সে গ্রামের ভালো-মন্দ সকল খবর অন্যদের শুনিয়ে যায়। নিজের কাজের সঙ্গে এ ধরনের খবর পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে সামির এক অন্যরকম আনন্দ পায়।
ক. সাঝের বেলার রোদে কার চোখ ঝলসে গেছে?
খ. 'জবর মাঝি সাচ্চা'-কে? বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকের সামির চরিত্রের সঙ্গে 'চিঠি বিলি' ছড়ায় কার চরিত্র সঙ্গতিপূর্ণ এবং কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "নির্ধারিত কাজের বাইরেও ছোটো ছোটো কাজের মাধ্যমে মানুষ অন্যরকম আনন্দ পেতে ও দিতে পারে"- উদ্দীপক ও 'চিঠি বিলি' ছড়া অবলম্বনে এ উক্তির যৌক্তিকতা নির্ণয় কর।





No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.