জীবন অনেক সুন্দর!!
একটি ছোট শহরে এক দরিদ্র মুচি বাস করত। তার বাড়ির পাশেই ছিল ছোট্ট একটি দোকান, যেখানে সে নিজের হাতে যত্ন করে জুতো তৈরি করত। এই কাজই ছিল তার একমাত্র আয়ের উৎস, এবং সেই সামান্য টাকায় চলত তার পরিবার। মুচি ছিল সৎ ও পরিশ্রমী , কিন্তু সময়ের সাথে তার বানানো জুতোর কদর কমতে লাগল। মানুষ ব্র্যান্ড, চকমকে দোকান আর দামি বিজ্ঞাপনের পেছনে ছুটল। তার জুতো বিক্রি না হওয়ায় তাকে অত্যন্ত কম দামে জুতো বেচতে হত। ধীরে ধীরে তার সঞ্চয় শেষ হয়ে এলো, সংসারে টানাপোড়েন বাড়ল। এমনকি স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হলো। মুচি হতাশ হয়ে পড়ল।
কিন্তু তার স্ত্রী বলত— “উপরওয়ালা সব দেখে। বিশ্বাস রেখো, একদিন নিশ্চয়ই তিনি পথ দেখাবেন।” এই আশ্বাসে মুচি কিছুটা শক্তি পেত, কিন্তু ভিতরে ভিতরে এক অসহায় বেদনায় পুড়ত। শেষে এমন একদিন এলো, যখন তার কাছে কেবল একটি জোড়া জুতো ছিল। উপকরণও শেষ, টাকা নেই। সেই জুতো নিয়েই সে বাজারে গেল। অনেক কষ্টে সেটি বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে সে এক ক্ষুধার্ত বৃদ্ধাকে দেখে কিছু টাকা তার হাতে তুলে দিল।
সন্ধ্যায় দোকানে ফিরে সে খেয়াল করল, এক কোণায় একটি চামড়ার টুকরো পড়ে আছে। “এক জোড়া জুতোই হয়তো বানানো যাবে,” ভাবল সে। সেই টুকরো কেটে রেখে দিল—ভেবেছিল পরদিন বানাবে। কিন্তু সকালে দোকানে এসে চমকে উঠল! যেখানে সে চামড়া কেটে রেখেছিল, সেখানে একজোড়া দারুণ সুন্দর জুতো তৈরি হয়ে রয়েছে! এত নিখুঁত কারুকাজ, এত ভালো ফিনিশিং—সে অবাক হয়ে গেল! সে সেই জুতো বিক্রি করে কিছু দরিদ্রকে সাহায্য করল, বাকিটা দিয়ে উপকরণ কিনে আনল। পরদিন সে আরও চামড়া কেটে রেখে দিল। আবার সকালে তৈরি জুতো পেল! এইভাবে দিনের পর দিন সে চামড়া রেখে যেত, আর সকাল হলে তৈরি জুতো পেত। তার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হতে লাগল।
এক রাতে, তারা ঠিক করল—দেখবে, কে এই সাহায্য করছে? তারা দোকানে লুকিয়ে রইল। রাত গভীর হলে, তিনটি ছোটো আকারের বামন দোকানে প্রবেশ করল! তারা হাসতে হাসতে জুতো তৈরি করতে লাগল। কাজ শেষে তারা চুপিচুপি চলে গেল। পরদিন সকালে মুচির স্ত্রী বলল, “তারা তো খুব সাধারণ পোশাক পরে, আমরা কি তাদের জন্য কিছু দিতে পারি না?” মুচি বলল, “তুমি জামা বানাও, আমি জুতো।” তারা পরদিন সেই উপহার দোকানে সাজিয়ে রাখল, কিন্তু চামড়া রাখল না। রাতে বামনরা এসে উপহার দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাচতে লাগল। তারপর তারা চলে গেল। আর কখনও তারা ফিরে এল না। কিন্তু এখন আর মুচি অসহায় না। তার হাতের কাজ নিখুঁত হয়ে উঠেছে। সে জানে কীভাবে ভালো জুতো বানাতে হয়, মানুষ কী পছন্দ করে। নিজের দক্ষতায় সে আবার ঘুরে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে হয়ে উঠল শহরের অন্যতম সফল মুচি।
গল্পের শিক্ষা- কখনো হাল ছেড়ো না। সৎ পথে থাকলে, পরিশ্রম করলে এবং কাউকে সাহায্য করলে ঈশ্বর ঠিকই সাহায্য করেন। তবে তাঁর উপহার তখনই প্রকৃত মূল্য পায়, যখন আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের পথ নিজেই তৈরি করি।
No comments
Thank you, best of luck