header ads

নিয়মানুবর্তিতা ।। বই পড়ার আনন্দ ।। আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান ।। বিশ্বায়ন ।। পরিবেশ দূষণ।। অনুচ্ছেদ ।। Class 9-10।।


নিয়মানুবর্তিতা
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চলার অভ্যাসই হলো নিয়মানুবর্তিতা। প্রকৃতির জগৎ থেকে মানবসমাজ, সর্বত্রই এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। এই গুণ ব্যক্তিকে সঠিক সময়ে সঠিক কার্য স¤পাদনে উদ্বুদ্ধ করে তোলে এবং বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করে। এটি সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। নিয়মানুবর্তিতার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো প্রকৃতি। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। প্রকৃতির এই নিয়মের সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে যেমন মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি মানবজীবনেও নিয়মানুবর্তিতার অভাবে চরম বিশৃঙ্খলা নেমে আসে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত এর গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্রজীবন হলো নিয়মানুবর্তিতা চর্চার আদর্শ সময়। যে ছাত্র নিয়ম মেনে চলে, সময়মতো পড়াশোনা, খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজ স¤পন্ন করে, সাফল্য তার কাছে সহজেই ধরা দেয়। খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে খেলতে হয়, সেনাবাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা হলো সাফল্যের মূলমন্ত্র। যে পরিবারে নিয়ম-শৃঙ্খলার চর্চা হয়, সেখানে শান্তি ও সংহতি বজায় থাকে। কর্মক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অসামান্য। একজন সুশৃঙ্খল কর্মী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে সহায়ক হন। নিয়মানুবর্তিতার অভাবে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিও জীবনে ব্যর্থতার সম্মুখীন হন। বিশৃঙ্খল জীবনযাপন মানুষের সময় ও শক্তির অপচয় ঘটায় এবং তাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, পৃথিবীতে যাঁরা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কঠোর নিয়মানুবর্তী। এই গুণটি মানুষকে দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ এবং শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। এটি কেবল বাহ্যিক আচরণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকেও বিকশিত করে। তাই মানবজীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে নিয়মানুবর্তিতার কোনো বিকল্প নেই। পরিশেষে বলা যায়, নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তিগত উন্নতির সোপান এবং জাতীয় অগ্রগতির মূল ভিত্তি। এই গুণটি আপনাআপনি অর্জিত হয় না, বরং শৈশব থেকে এর চর্চা করতে হয়। নিয়মানুবর্তিতার পথ ধরেই একটি সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন করা সম্ভব, যা সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।

বই পড়ার আনন্দ
বই জ্ঞানের আধার। মানুষের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু বই। বইয়ের পাতায় কালো অক্ষরে সঞ্চিত হয়ে আছে মানব জাতির হাজার বছরের জ্ঞানপ্রবাহ। জ্ঞানের ধারক হিসাবে বই অতীত আর বর্তমানের সংযোগসেতু। মানুষের অভ্যাস গুলোর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে বই পড়া। এটি নির্মল আনন্দের উৎস। পৃথিবীতে বিনোদনের হাজারো মাধ্যম রয়েছে। কিন্তু সব বিনোদন সবসময় নির্মল হয় না। ভালো বইয়ের সান্নিধ্য মানুষের মনে বয়ে আনে স্বর্গীয় সুখ। প্রিয় লেখকের বই বা গল্প মানুষের মনে যে তৃপ্তি এনে দিতে পারে তা অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্ভব নয়। ভালো বই আমাদের অবসর আর অবকাশ এর সময়কে ভরিয়ে তুলতে পারে অনাবিল আনন্দে। মানুষ যুগে যুগে বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জগতকে করেছে বিস্তৃত। মনের প্রসারতার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রাত্যহিক জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ক্লান্তি-হতাশা মানুষের মনকে যখন বিষিয়ে তোলে তখন বই পড়ার মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে অপার্থিব আনন্দ। বিজ্ঞানের বৈচিত্র্যময় জগতে হারিয়ে যাওয়া বা ইতিহাস, দর্শন তথা জ্ঞানের যে কোনো শাখায় বিচরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে বইপড়া। একটি ভালো বই পড়লে এর স্তরে স্তরে সন্ধান পাওয়া যায় নতুন জ্ঞান আর আনন্দের। আমার মতে, যারা আনন্দের জন্য বই পড়ে তারাই শ্রেষ্ঠ পাঠক এবং প্রকৃত জ্ঞানী। কারণ পৃথিবীতে অনুপম শ্রেষ্ঠ আনন্দ কেবল বই পাঠেই পাওয়া যায়। বই পড়ার মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের সান্নিধ্য পেতে পারি, পরিচিত হতে পারি তাঁদের চিন্তা-চেতনার সাথে। নশ্বর এ পৃথিবীতে অপার্থিব আনন্দ কেবল বই পড়াতেই পাওয়া সম্ভব। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের ¯পর্শময় পূর্ণাঙ্গ জীবন গঠনে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বই পড়া যে কত আনন্দের তা কেবল জ্ঞান-পিপাসু মানুষ মাত্রই জানেন। সেই আনন্দের ¯পর্শ যিনি পেয়েছেন, তাঁর অন্তর হয়েছে ঐশ্বর্যময় ও আলোকিত। অবশ্যই, একজন বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে তোমার একাদশ শ্রেণির উপযোগী করে, প্রদত্ত নির্দেশনা ও নিয়মানুসারে নিচের অনুচ্ছেদগুলো রচনা করে দিলাম।

আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান
বিজ্ঞানের তত্ত¡ীয় জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মানব কল্যাণে তার যে ব্যবহারিক প্রয়োগ, তাকেই প্রযুক্তিবিজ্ঞান বলা হয়। আধুনিক সভ্যতা স¤পূর্ণভাবে প্রযুক্তিবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এর দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। প্রযুক্তিবিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে আমাদের ঘর আলোকিত হয়েছে, কলকারখানা সচল হয়েছে এবং জীবন গতিময় হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায়, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের কল্যাণে আজ সমগ্র বিশ্ব একটি 'বৈশ্বিক গ্রাম'-এ পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। দ্রুতগামী যানবাহন যেমন- বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ মানুষের সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। নতুন নতুন রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র, উন্নত ঔষধ ও আধুনিক শল্যচিকিৎসা মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি করেছে। কৃষি খাতে কলের লাঙল, সেচযন্ত্র ও উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার খাদ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষা ও বিনোদনের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ক¤িপউটার, মাল্টিমিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন এখন অনেক সহজ। তবে মুদ্রার অপর পিঠের মতো, আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞানের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। পারমাণবিক বোমার মতো মারণাস্ত্রের আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। কলকারখানার বর্জ্য ও যানবাহনের ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তরুণ প্রজন্মের মানসিক ও সামাজিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সুতরাং, আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান একদিকে যেমন মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ, তেমনি এর অপব্যবহার ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ অভিশাপ। প্রযুক্তিকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করা হবে, নাকি ধ্বংসের কাজে—তা নির্ভর করে মানুষের সদিচ্ছার উপর। তাই প্রযুক্তিবিজ্ঞানের যথাযথ, মানবিক ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করেই মানবজাতির সার্বিক মঙ্গল সাধন সম্ভব।
বিশ্বায়ন

বিশ্বায়ন বা Globalization হলো- এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে একটি একক সমাজে পরিণত হয়। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব আজ আর কোনো বাধা নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব একটি 'বৈশ্বিক গ্রাম' বা ''Global Village''-এ রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বায়নের মূল চালিকাশক্তি হলো আধুনিক প্রযুক্তি এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি। ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার, দ্রুতগামী পরিবহন ব্যবস্থা এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন বিশ্বের মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এর ফলে পুঁজি, পণ্য, তথ্য এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদান বিশ্বজুড়ে অবাধ হয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলো অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে, যা সেসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখছে। মানুষ সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জীবনধারা স¤পর্কে জানতে পারছে। এর ফলে একটি মিশ্র সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে এবং মানুষের চিন্তাভাবনার জগৎ প্রসারিত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অংশীদার। তৈরি পোশাক শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত হয়েছে। তবে বিশ্বায়নের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় অনেক সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শক্তিশালী ও উন্নত দেশগুলো প্রায়শই দুর্বল দেশগুলোর উপর নিজেদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। এর ফলে অনেক দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়ে। অপসংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ তরুণ সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন আধুনিক বিশ্বের একটি অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। একে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাই বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করে এবং নেতিবাচক দিকগুলো স¤পর্কে সচেতন থেকে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে এগিয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এর সুফলকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধন করতে হবে।

বিশ্বায়ন
বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনীতি, সংস্কৃতি, তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে পারস্পরিক সংযোগ ও নির্ভরশীলতার যে প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তাকে বোঝায়। এটি পৃথিবীকে ছোট করে এনে মানুষকে এক বিশ্বসমাজে যুক্ত করেছে। বিশ্বায়নের ফলে আজ কোনো দেশ একা নয়; অর্থনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, যোগাযোগ, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্ব বেড়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি, আন্তর্জাতিক বাজার, বৈদেশিক বাণিজ্য—এসব মিলিয়ে আজ পৃথিবীর এক অংশে উৎপাদিত পণ্য অন্য অংশে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে। বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুযোগও তৈরি করেছে—যেমন কর্মসংস্থান, বিদেশি বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্বায়নের আরেক বড় উপহার। মুহূর্তে তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে, মানুষ মতামত ভাগ করছে, সংস্কৃতি আদান-প্রদান করছে। তবে এখানেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ—স্থানীয় সংস্কৃতির উপরে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বহুজাতিক কোম্পানির বাজার দখল এবং পরিবেশগত ঝুঁকি। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে বিশ্বায়নের স্রোতে টিকে থাকতে হয়। একইসাথে টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ঘটাতে হলে শিক্ষাগত ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা খুবই প্রয়োজন। সুতরাং বিশ্বায়ন একদিকে যেমন অগ্রগতির দরজা খুলে দেয়, তেমনি নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। সঠিক প্রস্তুতি, সচেতনতা ও সুষম নীতির মাধ্যমে বিশ্বায়নের সুফল আমরা সর্বোচ্চভাবে ভোগ করতে পারি।


পরিবেশ দূষণ
আমাদের চারপাশের আলো, বাতাস, মাটি, পানি, উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়েই পরিবেশ গঠিত। যখন প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে এই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জীবজগতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ সংকট। পরিবেশ দূষণের অজ¯্র কারণ বিদ্যমান, তবে এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণই প্রধান। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের ফলে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরিবেশ দূষণকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। কলকারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, ইটের ভাটা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো গ্যাস বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়। এর ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। শিল্পবর্জ্য, শহুরে আবর্জনা, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার পানিতে মিশে পানি দূষণ ঘটায়। এই দূষিত পানি পানের ফলে কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটে এবং জলজ প্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়। মাটিতে প্লাস্টিক, পলিথিন ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ফেলার কারণে মাটি দূষিত হয়, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং খাদ্যশৃঙ্খলে বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে দেয়। যানবাহনের হর্ন, মাইকের উচ্চ আওয়াজ এবং কলকারখানার শব্দ শব্দদূষণ সৃষ্টি করে, যা মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, হৃদরোগ ও মানসিক চাপের কারণ। এই সকল দূষণের সম্মিলিত প্রভাবে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সুতরাং, এই ভয়াবহ সংকট থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ করে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ রেখে যেতে পারব



No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.