header ads

ষষ্ঠ শ্রেণি।। আনন্দপাঠ।। আদুভাই।। নতুন নিয়মের প্রশ্ন-উত্তর।।


১. ক. আদুভাইয়ের করুণ পরিণতির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: 
প্রমোশনের জন্য গুরুতর পড়াশোনা করায় আদুভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শয্যাশায়ী হয়েও পড়াশোনা চালিয়ে গেলে তাঁর অসুস্থতা আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে এবং পরিণতিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

'আদুভাই' গল্পে আদুভাইয়ের একই শ্রেণিতে যুগ যুগ ধরে আটকে থাকার গতানুগতিক ধারায় ছেদ পড়ে, যেবার তাঁর ছেলে ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পায়। স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে প্রমোশন না নিলে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দেন। ছেলে তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়ায় তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু স্ত্রীর ক্রোধে প্রমোশনের জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ জানান। পরীক্ষার উত্তরপত্রে মনগড়া উত্তর লেখায় শিক্ষকগণ তাঁকে প্রমোশন দিতে অপারগ হলে জিদে আদুভাই পড়াশোনার মাত্রা বাড়িয়ে দেন। প্রমোশনের জন্য কঠোরভাবে পরিশ্রম করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পৃথিবী থেকেই চলে যান।

আদুভাই শেষমেশ প্রমোশন পেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু নতুন ক্লাসে আর যেতে পারেননি। প্রমোশনের আনন্দ উদ্যাপনের দিনই অসুস্থতার জন্য তাঁর নিশ্বাস থেমে যায়।

খ. আদুভাই হঠাৎ প্রমোশন প্রাপ্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: 
আদুভাইয়ের বড়ো ছেলে সেভেনে প্রমোশন পেলে তিনি প্রমোশন প্রাপ্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিজের ছেলে তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়ায় তাঁর আপত্তি না থাকলেও স্ত্রীর আপত্তিতে প্রমোশনের জন্য তাঁকে ব্যস্ত হয়ে উঠতে হয়।

'আদুভাই' গল্পে আদুভাই ভাই যথাসময়ের পূর্বে প্রমোশন এগিয়ে আনার বিপক্ষে ছিলেন। সব সাবজেক্টে পাকা হয়েই তিনি প্রমোশন নিতে চাইতেন। ফলে ক্লাস সেভেনেই তাঁকে আটকে থাকতে হয় যুগ যুগ ধরে। এর মধ্যে আদুভাইয়ের ছেলে সেবার ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পায়। নিজের ছেলের প্রতি তাঁর কোনো ঈর্ষা নেই। ছেলের সঙ্গে একই শ্রেণিতে পড়ায় তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু আদুভাইয়ের স্ত্রীর তাতে ঘোরতর আপত্তি। ছেলে বাবাকে ছাড়িয়ে যাবে, তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। ছেলে উপরের শ্রেণিতে উঠে যাবে, পিতা তখনো সেভেনে আটকে থাকবে, এতে তাঁর স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি আদুভাইকে এক কঠিন শর্তের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। হয় আদুভাইকে প্রমোশন নিয়ে উপরের শ্রেণিতে যেতে হবে, না হয় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হবে। স্ত্রীর এমন কঠোর শর্তে আদুভাই ভেঙে পড়েন। পড়াশোনা ছাড়া তিনি বাঁচতে পারবেন না। পড়াশোনা ছাড়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তিনি তাঁর দীর্ঘ জীবনে প্রমোশনের জন্য সুপারিশ করাকে অপছন্দ করলেও বাধ্য হয়ে এবার তাঁকে প্রমোশনের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতে হয়।

ফলে দেখা যায়, কখনো প্রমোশন নিয়ে চিন্তা না করা আদুভাই প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পড়াশোনা ছাড়ার ভয়ে। নিজের ছেলে সেভেনে প্রমোশন পেলে স্ত্রীর কঠিন শর্তই তাঁকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।

২. ক. স্কুলগেটে দাঁড়িয়ে আদুভাই বক্তৃতা করছিলেন কেন?

শিক্ষকদের কাছে প্রমোশনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হলে আদুভাই তার প্রতিবাদে স্কুলগেটে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলেন।

'আদুভাই' গল্পে আদুভাইয়ের ছেলে ক্লাস সেভেন প্রমোশন পেলে আদুভাইকেও সেভেন থেকে উত্তীর্ণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। নিজের আপত্তি না থাকলেও স্ত্রীর হুমকিতেই তিনি শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। পরীক্ষার খাতায় তাঁর মনগড়া উত্তরের জন্য শিক্ষকরা প্রমোশন আটকে দিলে তিনি বিশেষ বিবেচনার দ্বারস্থ হন। তাতেও প্রমোশন না মিললে ক্ষোভে স্কুলগেটে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানান।

আদুভাইয়ের অসহায় মুহূর্তে প্রমোশনের জন্য সুপারিশ না করায় তিনি শিক্ষকদের বিবেচনাবোধের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলগেটে বক্তৃতা করেন।

২. খ. আদুভাইয়ের ক্লাস সেভেনে আটকে থাকার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: পরীক্ষার খাতায় মনগড়া উত্তর লেখায় আদুভাই পাশ নম্বর পেতেন না। পাশ নম্বর না পেয়ে কখনো প্রমোশনের জন্য আবেদনও করতেন না। এভাবেই তিনি ক্লাস সেভেনে আটকে থাকতেন।
'আদুভাই' গল্পে আদুভাই ক্লাস সেভেনে আটকে পড়া একজন শিক্ষার্থী। তিনি কখন থেকে ক্লাস সেভেনে পড়েন তা কেউ জানে না। তাঁর সহপাঠীরা অনেকে একই স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। তাতে তাঁর কোনো ভাবান্তর হয় না। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসতেন, প্রথম বেঞ্চে বসতেন, মন দিয়ে ক্লাস করতেন, নোট করতেন। কিন্তু পরীক্ষার খাতায় উত্তর দিতেন মনগড়া। প্রশ্নের সঙ্গে সাযুজ্য না রেখে উত্তর লেখায় শিক্ষকরা তাঁকে নম্বর দিতেন না। তাঁর প্রমোশন আটকে যেত। তাঁর বন্ধুরা তাঁকে প্রমোশনের জন্য নানাবিধ পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বললে তিনি ক্ষেপে যেতেন। জ্ঞানলাভের জন্য পড়াশোনা, প্রমোশনের জন্য নয়, এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি পালটা যুক্তি দিতেন। যথাসময়ের পূর্বে প্রমোশন নেওয়া তাঁর পছন্দ ছিল না। সব সাবজেক্টে পাকা হয়েই তিনি প্রমোশনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু তাঁর পাকা হওয়া আর হয়ে উঠত না। এভাবেই প্রমোশন না পেয়ে এবং তাঁর জন্য অতিরিক্ত কোনো প্রচেষ্টা না চালিয়ে যুগ যুগ ধরে তিনি ক্লাস সেভেনের স্থায়ী শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছিলেন।

আদুভাই সব সাবজেক্টে পাকা হয়েই প্রমোশনে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তাঁর পরীক্ষার খাতায় দেখা যেত ভিন্ন চিত্রের প্রতিফলন। পরীক্ষার খাতায় তাঁর মনগড়া উত্তর দেখে শিক্ষকরা তাঁকে নম্বর দিতে পারতেন না। তাই আদুভাই ক্লাস সেভেনে আটকে যান।

৩. ক. লেখক ও আদুভাইয়ের সম্পর্কের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তর:  লেখক ও আদুভাইয়ের মধ্যে একধরনের স্নেহ, ভালোবাসা ও সহানুভূতির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। উভয়ই একে অন্যের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল।

'আদুভাই' গল্পে ক্লাস সেভেনে আদুভাইয়ের সঙ্গে লেখকের দেখা। আদুভাই লেখককে নিতান্ত আপনার লোক বলে ধরে নেন। লেখকের উপর যেন তাঁর কতকালের দাবি। লেখক প্রমোশন পেয়ে অন্য ক্লাসে চলে গেলে আদু ভায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। প্রমোশনের জন্যও তিনি লেখকেরই শরণাপন্ন হন। প্রমোশন প্রাপ্তির উৎসবে দীর্ঘদিনে যোগাযোগহীনতায়ও তিনি লেখককে নিমন্ত্রণ করেন। লেখকও আদুভাইকে সম্মান ও সহানুভূতির চোখে দেখেন। তাঁর প্রমোশনের জন্য শিক্ষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। যদিও যোগাযোগ নেই, তবুও তিনি আদুভাইকে স্মরণ করেন বিশেষ শ্রদ্ধায়। এভাবেই লেখক ও আদুভাইয়ের মধ্যে এক আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে।

লেখক ও আদুভাই পরস্পরকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতে গিয়ে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আদুভাইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত তা অটুট ছিল।

৩. খ. আদুভাইকে ক্লাসের পুরাতন টেবিল ব্ল‍্যাকবোর্ডের মতো অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলার যৌক্তিকতা নিরূপণ করো।

একই ক্লাসে যুগ যুগ ধরে আটকে থাকতে থাকতে আদুভাই হয়ে উঠেছেন ক্লাসের স্থায়ী অংশ। লেখক তাঁকে ক্লাসের পুরাতন টেবিল ব্ল‍্যাকবোর্ডের মতোই নিতান্ত অবিচ্ছেদ্য ও অত্যন্ত স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত করেছেন।

'আদুভাই' গল্পে স্কুলে আদুভাইয়ের সময়কাল সম্পর্কে কেউই জানে না। তিনি কবে থেকে স্কুলে আছেন, সেভেন ভিন্ন অন্য কোনো ক্লাসে কখনো পড়েছেন কি না এসব ব্যাপারে বলতে পারে না। এমনকি শিক্ষকগণও জানেন না। স্কুলে এমন অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা আদুভাইয়ের সাথেই ক্লাস সেভেনে পড়েছেন। আদুভাইয়ের প্রাচীনত্ব ও স্থায়িত্ব স্কুলের অবকাঠামোর মতো। বছর বছর নতুন শিক্ষার্থী আসে-যায়, অবকাঠামো থেকে যায়। স্কুলের দালান, ক্লাসরুম, চেয়ার-টেবিল, ব্ল‍্যাকবোর্ড এসব স্থায়ী বস্তুর মতো আদুভাইকেও লেখক স্কুল বা ক্লাসের স্থায়ী অঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করেছেন। আদুভাইয়ের এ নিয়ে কোনো বিকার নেই। তিনি প্রমোশনের জন্য ব্যাকুল নন। সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে উঠেই তিনি প্রমোশনে বিশ্বাসী ।

প্রমোশনের জন্য নয়, জ্ঞানার্জনের জন্যই তাঁর বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া। তাঁর বিশ্বাস, একদিন তিনি ঠিকই সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে উঠবেন ও প্রমোশন পাবেন। সেই বিশ্বাসেই তিনি শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে প্রমোশনের চিন্তা করেন না। ফলে তাঁকে আটকে থাকতে হয় ক্লাস সেভেনেই। এভাবে একই ক্লাসে আটকে থাকতে থাকতে তিনি সেই ক্লাসের পুরাতন টেবিল ব্ল্যাকবোর্ডের মতোই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হন।

আদুভাই প্রমোশনে নয়, জ্ঞানার্জনে বিশ্বাসী। প্রমোশন তাঁকে টানেনি। সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে ওঠাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য। এভাবেই তিনি প্রমোশন না পেয়ে একই ক্লাসে আটকে যেতে গিয়ে সেই ক্লাসেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠেন।

৪.ক. 'সংসার সাগরের প্রবল স্রোতে কে কোথায় ভেসে গেলাম, জানলাম না।'- ব্যাখ্যা করো।

'আদুভাই' গল্পে লেখকের সাথে আদুভাইয়ের দীর্ঘদিন যোগাযোগ না হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

লেখক ও আদুভাই একই স্কুলে পড়তেন। তিনি ক্লাস সেভেনে আদুভাইয়ের সহপাঠী ছিলেন। লেখক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উন্নীত হলেও আদুভাই ক্লাস সেভেনেই পড়ে থাকেন। ফলে আদুভাইয়ের সাথে লেখকের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। জীবনের প্রয়োজনে অবিরাম ছুটে চলতে গিয়ে উভয়ের পক্ষে আর সেভাবে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় না।

মূলত, আদুভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি বোঝানোর জন্যই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।


৪. খ. আদু মিয়া ওরফে আদুভাইয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: 
আবুল মনসুর আহমদ রচিত 'আদুভাই' গল্পে আদু মিয়া ওরফে আদুভাই একইসাথে সহজসরল, সৎ, নিয়মনিষ্ঠ ও দুর্ভাগা একটি চরিত্র। তিনি প্রতিদিন স্কুলে যান, ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শোনেন, সকলের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করেন না কিন্তু ভাগ্যের ফোরে কখনো ক্লাস সেভেন পাশ করতে পারেন না।

'আদুভাই' গল্পে আদুভাইকে অত্যন্ত নিরীহ একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি প্রমোশন না পেলেও কখনো অন্যকে হিংসা করেন না। নিজের ব্যর্থতা নিয়ে তার মধ্যে কোনো হতাশা বা বিষণ্ণতাও পরিলক্ষিত হয় না। তিনি কখনো নকল করে পাশ করার চেষ্টা করেননি। এমনকি নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কখনো কোনো শিক্ষককে অনুরোধ করেননি। তিনি সবসময় নিজের যোগ্যতায় ক্লাস এইটে উন্নীত হতে চেয়েছেন।

আদুভাই তার প্রমোশন পাওয়ার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে উঠলে তার প্রমোশন কেউ আটকে রাখতে পারবে না। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনকে তিনি ঘৃণা করতেন। তবে তিনি তাকে নিয়ে অন্যদের তামাশা ঠিকমতো বুঝতে পারতেন না। কারণ তার মনে কোনো জটিলতা ছিল না।

আদুভাইয়ের মনে তার স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি চাপা ক্ষোভ ছিল। কারণ, শিক্ষকেরা চাইলেই তাকে প্রমোশন দিতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। অবশেষে আদুভাই প্রবীণ বয়সে কঠোর পরিশ্রম করে ক্লাস সেভেন পাশ করেন।

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, আদু মিয়া ওরফে আদুভাই ছিলেন অত্যন্ত সৎ, নিরীহ, পরিশ্রমী, বিনয়ী, দুঃখী ও দুর্ভাগা একটি চরিত্র।


৫. ক. শিক্ষকেরাও আদুভাইকে 'আদুভাই' বলে ডাকতেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: শিক্ষকদের অনেকে একসময় আদুভাইয়ের সহপাঠী ছিলেন বলে তারা তাকে 'আদুভাই' বলে ডাকতেন।

'আদুভাই' গল্পের প্রধান চরিত্র আদুভাই, তিনি বছরের পর বছর ধরে ক্লাস | সেভেনে আটকে থাকেন। তার সহপাঠীরা যথাসময়ে প্রমোশন পেয়ে উপরের ক্লাসে উঠে যায়। এমনকি অনেকে একই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদানও করেন। তাই তারা আদুভাইকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে 'আদুভাই' বলে সম্বোধন করতেন। ছাত্র-শিক্ষক সকলের কাছেই তিনি 'আদুভাই' নামেই পরিচিত ছিলেন। অর্থাৎ, স্কুলের অনেক শিক্ষক এককালে আদুভাইয়ের সাথে পড়াশোনা করায় তারা তাকে সম্মান করে 'আদুভাই' বলে ডাকতেন।


৫. খ. 'আদুভাই' গল্পের মূলশিক্ষা কী? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: 
'আদুভাই' গল্পে আব্দু মিয়া ওরফে আদুভাইয়ের শিক্ষাজীবনের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। লেখক আবুল মনসুর আহমদ আদুভাইয়ের মাধ্যমে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে পাঠকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছেন। আর তা হলো জ্ঞানার্জনের পথে বয়স যেমন কোনো বাধা নয়, তেমনি কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট স্তরে স্থির থাকাও যুক্তিযুক্ত নয়। জীবনে সবকিছুর ভারসাম্য থাকা জরুরি।
'আদুভাই' গল্পে আদুভাই পরীক্ষার উত্তরপত্রে নিজের মতো করে উত্তর করতেন, আবার কখনো প্রশ্নও জুড়ে দিতেন। ফলে তার প্রমোশন আটকে যেত। কিন্তু এজন্য তিনি হতাশ হতেন না। তিনি সব বিষয়ে 'পাকা' হয়ে তবেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে চাইতেন। ফলে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।
আদুভাই একসময় তার ছেলের বয়সিদের সাথে একই ক্লাসে পড়তেন। এ নিয়ে তার মধ্যে তেমন কোনো আফসোস ছিল না। এ বিষয়টি থেকে শেখা যায় যে, জ্ঞানার্জনের পথে বয়স কোনো বাধা নয়। কিন্তু আদুভাই যেভাবে নির্বিকার ভঙ্গিতে ক্লাস সেভেনে সারা জীবন আটকে থেকেছেন, জীবন সম্পর্কে এমন নির্লিপ্ততাও কাম্য নয়। কারণ, তিনি সব বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানলাভের অপেক্ষায় থেকে গিয়েছেন। অথচ তিনি চাইলেই শিক্ষকদের অনুরোধ করে বিশেষ বিবেচনায় প্রমোশন নিয়ে নিজের দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারতেন। এ বিষয়টি আমাদের শেখায় যে, কোনো কিছু নিয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে না থেকে লক্ষ্য পূরণে নানানভাবে চেষ্টা করা উচিত।

সুতরাং, উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, 'আদুভাই' গল্প থেকে যেকোনো বয়সে জ্ঞানার্জন এবং কোনো বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন একই অবস্থানে স্থির না থাকার শিক্ষা পাওয়া যায়।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.