header ads

ষষ্ঠ শ্রেণি।। আনন্দ পাঠ।। একটি সুখী গাছের গল্প।। প্রশ্ন-উত্তর

 

ষষ্ঠ শ্রেণি।। আনন্দ পাঠ।। একটি সুখী গাছের গল্প।। 
১. (ক) ছেলেটি ছোটো থাকাকালীন আমগাছের সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল?
শৈশবে ছেলেটি ও আমগাছের মধ্যে এক নির্মল ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এই সম্পর্কটি ছিল পারস্পরিক আনন্দের, যেখানে কোনো ধরনের জাগতিক চাহিদা বা স্বার্থের স্থান ছিল না। "একটি সুখী গাছের গল্প" অনুসারে, ছেলেটি প্রতিদিন আমগাছটির কাছে খেলতে আসত। সে গাছের পাতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে নিজেকে রাজা ভাবত, গাছের ডালে দোল খেত এবং তার সুমিষ্ট আম পেড়ে খেত। তারা একসাথে লুকোচুরি খেলত এবং ছেলেটি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ত, তখন গাছের শীতল ছায়ায় ঘুমিয়ে যেত।
গাছটি ছেলেটির এই সাহচর্য ভীষণভাবে উপভোগ করত। ছেলেটির উপস্থিতিতে গাছটির একাকীত্ব দূর হতো এবং সে নিজেকে সুখী মনে করত। ছেলেটির সরল মন এবং খেলার ছলে গাছটিকে ভালোবাসা—এই সবকিছুই তাদের সম্পর্ককে এক নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের রূপ দিয়েছিল। বড় হওয়ার সাথে সাথে ছেলেটির প্রয়োজন বাড়লেও, শৈশবের এই স্মৃতি তাদের সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে রয়ে যায়।
১. (খ) আমগাছটি কেন নিজের সবকিছু ছেলেটিকে বিলিয়ে দিয়ে সুখী হতো? ব্যাখ্যা করো।
আমগাছটি ছেলেটিকে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে সুখী হতো কারণ তার ভালোবাসা ছিল শর্তহীন এবং ছেলেটির আনন্দেই সে নিজের সার্থকতা খুঁজে পেত। ছেলেটির প্রতি গাছের ছিল অসীম মমতা ও স্নেহ, যা সময়ের সাথে সাথে আরও গভীর হয়েছে।
"একটি সুখী গাছের গল্প" থেকে জানা যায়, ছেলেটি যখন ছোট ছিল, তখন তার খেলার সঙ্গী হয়ে গাছটি আনন্দ পেত। ছেলেটির নিঃসঙ্গ জীবনে গাছটি ছিল এক আনন্দের উৎস। সময়ের পরিক্রমায় ছেলেটি বড় হয় এবং তার চাহিদাগুলোও বদলাতে থাকে। তখন সে আর গাছের সাথে খেলতে আসত না, বরং নিজের প্রয়োজনে আসত। তার যখন টাকার দরকার হলো, গাছটি তাকে তার সমস্ত আম বিক্রি করতে দিলো। বাড়ি বানানোর জন্য ডালপালার প্রয়োজন হলে, গাছটি নিজের ডালগুলোও কেটে নিতে বলল। এমনকি, নৌকা বানিয়ে দূরে চলে যাওয়ার জন্য ছেলেটি যখন গাছের কাণ্ডটি চাইল, গাছটি হাসিমুখে তাও দিয়ে দিলো।
গাছটির এই আত্মত্যাগের পেছনে ছিল ছেলেটির প্রতি তার নিঃশর্ত ভালোবাসা। ছেলেটি তার জীবনে আনন্দ নিয়ে এসেছিল, তাই তার যেকোনো প্রয়োজনে গাছটি নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ছিল। নিজের সবকিছু হারিয়ে, এমনকি গুঁড়িতে পরিণত হয়েও গাছটি সুখী ছিল, কারণ সে তার প্রিয় বন্ধুর বিশ্রামের জন্য আশ্রয় হতে পেরেছিল। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই গাছটিকে তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে সুখী হতে শিখিয়েছিল।

২.
ক. ছেলেটি কেন বসে জিরোবার জন্য নিরিবিলি একটি জায়গা খুঁজছিল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
শেল সিলভারস্টাইনের "একটি সুখী গাছের গল্প" একাধারে মানবজীবন এবং প্রকৃতির নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক কালজয়ী উপাখ্যান। গল্পের শেষে ছেলেটির একটি নিরিবিলি আশ্রয় খোঁজার মধ্য দিয়ে জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া এক ক্লান্ত পথিকের অন্তিম মুহূর্তের প্রশান্তির আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে। শৈশবের অফুরন্ত প্রাণশক্তি যখন বার্ধক্যের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়, তখন মানুষের শেষ আশ্রয় হয় প্রকৃতির শান্ত ও স্নিগ্ধ কোল।
গল্পের ছেলেটি তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পার করেছে গাছটির সঙ্গেই—কখনো খেলার সাথি হিসেবে, কখনো বা নিজের প্রয়োজন মেটানোর উৎস হিসেবে। শৈশবে যে দুরন্ত ছেলেটি আমগাছের ডাল ধরে দোল খেত, তরতর করে গাছে চড়ে বেড়াত, আজ সে বার্ধক্যে উপনীত। জীবনের দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ তাকে করেছে পরিশ্রান্ত ও জীর্ণ। তার হাঁটার শক্তি কমে এসেছে, শরীরের প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গেছে এবং মন থেকে মুছে গেছে নতুন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
জীবনের এই শেষ পর্যায়ে এসে তার আর টাকা, বাড়ি বা遠 ভ্রমণের জন্য নৌকার কোনো প্রয়োজন নেই। তার একমাত্র চাওয়া হলো একটু শান্তি, একটু বিশ্রাম। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ক্লান্ত ছেলেটি তাই এমন একটি নিরিবিলি ও শান্ত জায়গা খুঁজছিল, যেখানে সে তার অবসন্ন শরীরকে এলিয়ে দিতে পারে এবং জীবনের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করে কিছুটা প্রশান্তি পেতে পারে। তার এই অন্বেষণ কেবল শারীরিক বিশ্রামের জন্য ছিল না, বরং এটি ছিল এক মানসিক শান্তির খোঁজ—যেখানে জীবনের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে সে নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। জীবনের পরিক্রমায় ক্লান্ত ও শক্তিহীন হয়ে পড়া ছেলেটির জন্য একটি শান্ত ও নিরিবিলি জায়গার প্রয়োজন ছিল অবধারিত, যা তার অন্তিম যাত্রার এক স্বাভাবিক পরিণতি।

খ. ছেলেটির জীবন প্রক্রিয়ায় আমগাছটির ভূমিকা পর্যালোচনা করো।
উত্তর:
"একটি সুখী গাছের গল্প"–এ আমগাছটি কেবল একটি বৃক্ষ নয়, বরং এটি ছেলেটির জীবনে এক মহৎ অভিভাবক, নিঃস্বার্থ বন্ধু এবং আত্মত্যাগী ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ছেলেটির জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে গাছটি তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে এক অনন্য ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছেলেটির জীবনচক্রের প্রতিটি বাঁকে আমগাছটির ভূমিকা ছিল অপরিহার্য এবং অবিস্মরণীয়।
ছেলেটির জীবন প্রক্রিয়ায় আমগাছের ভূমিকা নিম্নোক্তভাবে পর্যালোচনা করা যায়:
যখন ছেলেটি ছোট ছিল, তখন আমগাছটি ছিল তার একমাত্র খেলার সাথি। তার ছায়ায় সে খেলা করত, ডাল ধরে দোল খেত এবং তার নিঃসঙ্গ জীবনে গাছটিই ছিল আনন্দের উৎস। এই সময়ে তাদের সম্পর্ক ছিল純粹 বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার।
ছেলেটি বড় হওয়ার পর তার জীবনে নানা জাগতিক চাহিদা তৈরি হয়। টাকার প্রয়োজনে গাছটি তার সমস্ত আম নির্দ্বিধায় দিয়ে দেয়। এরপর বাড়ি বানানোর জন্য তার ডালপালাগুলোও কেটে নিতে বলে। গাছটি নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিলিয়ে দিয়েও ছেলেটির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে সুখী হতো।
মধ্য বয়সের আশ্রয়: জীবনে আরও এগিয়ে যাওয়ার পর ছেলেটি দূরদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য একটি নৌকা চায়। তখন আমগাছটি তার নিজের কাণ্ড বা গুঁড়িটিও তাকে দিয়ে দেয়, যাতে সে নৌকা বানিয়ে ভেসে যেতে পারে। এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গাছটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যায়, কিন্তু ছেলেটির প্রয়োজন মেটাতে পারার আনন্দে সে তৃপ্ত থাকে।
বহু বছর পর ছেলেটি যখন বৃদ্ধ ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে, তখন তার আর কোনো চাহিদা থাকে না, কেবল একটু বসে বিশ্রাম নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছাড়া। গাছটির কাছে তখন দেওয়ার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, শুধু তার পরিত্যক্ত গুঁড়ি বা গোড়াটি ছাড়া। সেই গুঁড়িতেই সে ছেলেটিকে পরম মমতায় আশ্রয় দেয়।
এভাবে ছেলেটির পুরো জীবন জুড়েই আমগাছটি এক নিঃস্বার্থ অভিভাবকের মতো তাকে ছায়া দিয়েছে, তার প্রয়োজন মিটিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। ছেলেটির জীবন প্রক্রিয়ায় আমগাছটি ছিল ভালোবাসার এক চিরন্তন প্রতীক, যার ভূমিকা ছিল এক মহৎ ত্রাতার সমান।

৩. 
ক. আমগাছটির কাছ থেকে ছেলেটি কী কী সুবিধা নিয়েছিল?

উত্তর:
"একটি সুখী গাছের গল্প"–এ ছেলেটি এবং আমগাছটির সম্পর্কটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। শৈশবের নির্মল বন্ধুত্ব থেকে শুরু হয়ে যৌবন ও বার্ধক্যে এই সম্পর্ক প্রয়োজনের সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। ছেলেটি তার জীবনব্যাপী বিভিন্ন প্রয়োজনে আমগাছটির কাছ থেকে নিঃশর্তভাবে নানাবিধ সুবিধা ভোগ করেছে, যা তার জীবনের পথচলাকে সহজতর করেছে।
ছেলেটি তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমগাছটির কাছ থেকে যেসকল সুবিধা নিয়েছিল, তা হলো- 
ছোটবেলায় সে গাছটির ছায়ায় খেলাধুলা করে, তার ডালে চড়ে এবং তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে অফুরন্ত আনন্দ লাভ করত। গাছটি ছিল তার নিঃসঙ্গ শৈশবের একমাত্র সঙ্গী।
তরুণ বয়সে টাকার প্রয়োজন হলে গাছটি তাকে তার সমস্ত ফল (আম) বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের সুবিধা দেয়।
যৌবনে একটি পরিবারের জন্য আশ্রয় বা বাড়ি তৈরি করার প্রয়োজনে গাছটি তার সমস্ত ডালপালা কেটে নেওয়ার অনুমতি দেয়, যা দিয়ে সে নিজের বাড়ি তৈরি করে।

জীবনের এক পর্যায়ে যখন ছেলেটি সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও ভেসে যেতে চায়, তখন একটি নৌকা বানানোর জন্য গাছটি তার মূল কাণ্ডটি পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়। এই সুবিধার মাধ্যমে সে জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি খোঁজার সুযোগ পায়।
শেষ বয়সের বিশ্রাম: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে, যখন সে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত, তখন গাছটির অবশিষ্ট গুঁড়িতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধা লাভ করে। এটি ছিল তার জীবনের শেষ আশ্রয়।

সুতরাং, দেখা যায় যে ছেলেটি তার পুরো জীবন জুড়েই গাছটির কাছ থেকে মানসিক, আর্থিক, শারীরিক এবং আবেগিক—সব ধরনের সুবিধা ভোগ করেছে। গাছটি ভালোবেসে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তার প্রতিটি প্রয়োজন মিটিয়েছে।

খ. আমগাছ ও ছেলেটির সম্পর্কের স্বরূপ বর্ণনা করো।
উত্তর:
"একটি সুখী গাছের গল্প"–এ আমগাছ ও ছেলেটির সম্পর্কটি ছিল গভীর, জটিল এবং বহুমাত্রিক। এই সম্পর্কটি একদিকে যেমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও материসুলভ মমতার প্রতীক, তেমনই অন্যদিকে এটি মানবচরিত্রের স্বার্থপরতা এবং প্রকৃতির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতার এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সম্পর্কের রূপান্তর ঘটলেও এর মূলে একটি অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আমৃত্যু থেকে যায়।

বিস্তারিত আলোচনা: আমগাছ ও ছেলেটির সম্পর্কের স্বরূপটি দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:

আমগাছের দৃষ্টিকোণ থেকে: আমগাছের ভালোবাসা ছিল সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ, শর্তহীন এবং материসুলভ। ছেলেটির উপস্থিতিই ছিল তার একমাত্র আনন্দ। ছেলেটি যখন আসত, সে সুখী হতো; যখন সে কিছু চাইত, তখন তা দিতে পেরেই তার আনন্দ দ্বিগুণ হতো। নিজের ফল, ডালপালা, এমনকি কাণ্ড বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পরেও তার কোনো আক্ষেপ ছিল না, কারণ সে ছেলেটিকে সাহায্য করতে পেরেছিল। তার ভালোবাসা ছিল দেওয়ার, পাওয়ার নয়। এই সম্পর্ক ছিল প্রকৃতির সঙ্গে মানবজাতির সম্পর্কের এক প্রতীকী রূপ, যেখানে প্রকৃতি নীরবে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দেয়।
ছেলেটির দৃষ্টিকোণ থেকে: ছেলেটির দিক থেকে সম্পর্কটি ছিল সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল। শৈশবে তার ভালোবাসা ছিল নির্মল ও純粹। সে গাছটিকে তার খেলার সাথি হিসেবে দেখত এবং মন থেকেই তাকে ভালোবাসত। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনের জটিলতা ও জাগতিক চাহিদা তার ভালোবাসাকে স্বার্থপরতায় রূপান্তরিত করে। সে কেবল তখনই গাছের কাছে ফিরে আসত, যখন তার কিছুর প্রয়োজন হতো। সে গাছটির নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে 당연 হিসেবে ধরে নিয়েছিল এবং তার আত্মত্যাগের গভীরতা হয়তো কখনো উপলব্ধিই করেনি।
তবে, বৃদ্ধ বয়সে ক্লান্ত শরীরে যখন সে আবার সেই গাছের গুঁড়িতেই ফিরে আসে, তখন বোঝা যায় তার অবচেতন মনে গাছটিই ছিল তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়। যদিও ছেলেটির আচরণে স্বার্থপরতা প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু তাদের সম্পর্কটি ছিল এক অসম অথচ গভীর ভালোবাসার বন্ধন, যা প্রকৃতির চিরন্তন উদারতা এবং মানবচরিত্রের সীমাবদ্ধতাকে একসঙ্গে তুলে ধরে।


৪. 
ক. ছেলেটি বড়ো হয়ে ওঠার পর আমগাছটি প্রায়ই একলা দাঁড়িয়ে থাকত কেন?
উত্তর:
"একটি সুখী গাছের গল্প"–এর আমগাছটির একাকীত্ব আসলে মানবজীবনের পরিবর্তন এবং সম্পর্কের রূপান্তরের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। শৈশবের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ছেলেটির সঙ্গে গাছটির ছিল, তা ছেলেটির বড়ো হওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যায়। তার জীবনের নতুন চাহিদা ও ব্যস্ততা তাকে গাছটির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল, ফলে গাছটিকে প্রায়ই একলা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।

শৈশবে ছেলেটির জগৎ ছিল আমগাছটিকে কেন্দ্র করে। প্রতিদিন সে গাছটির কাছে খেলতে আসত, তার সঙ্গে সময় কাটাত। তাদের এই নিত্যকার সঙ্গ গাছটির নিঃসঙ্গতা দূর করত। কিন্তু ছেলেটি যখন বড় হতে শুরু করে, তখন তার জীবনের পরিধিও বাড়তে থাকে। তার জগতে নতুন বন্ধু, নতুন ভাবনা এবং নতুন সব প্রয়োজন এসে ভিড় করে।

বয়ঃসন্ধিকালে তার খেলার প্রতি আগ্রহ কমে আসে এবং সে बाहरी জগতের ব্যস্ততায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর যৌবনে অর্থ উপার্জন, সংসার ও বাড়ি তৈরির মতো জাগতিক দায়িত্বগুলো তাকে আরও ব্যস্ত করে তোলে। ফলে, গাছটির কাছে প্রতিদিন খেলতে আসার অভ্যাস সে হারিয়ে ফেলে। তার জীবনে গাছটির ভূমিকা তখন আর খেলার সাথির ছিল না, বরং প্রয়োজনের বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। সে কেবল তখনই আসত যখন তার কিছু দরকার হতো। এই দীর্ঘ বিরতির সময়গুলোতে আমগাছটি একা দাঁড়িয়ে থাকত, ছেলেটির পথের দিকে চেয়ে থাকত এবং তার আগমনের অপেক্ষায় থাকত। ছেলেটির জীবনধারা পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ায় এবং তার জগৎ প্রসারিত হওয়ায় সে গাছটির কাছ থেকে মানসিকভাবে দূরে সরে গিয়েছিল, আর একারণেই গাছটিকে প্রায়শই একাকীত্বের বেদনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।


খ. অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মহত্ত্ব 'একটি সুখী গাছের গল্প' গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ভূমিকা: "একটি সুখী গাছের গল্প" মূলত নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের এক মহৎ গাঁথা। এই গল্পে আমগাছটির মাধ্যমে লেখক শেল সিলভারস্টাইন অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার যে মহত্ত্ব, তা অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গাছটির প্রতিটি ত্যাগ ছিল শর্তহীন এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, যা তাকে মহত্ত্বের এক অনন্য শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

গল্পে আমগাছটি যেভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, তা এক মহৎ আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর বিভিন্ন দিক হলো:

গাছটির ভালোবাসা কোনো কিছুর বিনিময়ে ছিল না। সে ছেলেটিকে ভালোবাসত এবং তার खुशीর জন্য নিজের সবকিছু উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ছিল। তার প্রতিটি ত্যাগের পেছনে ছিল কেবল纯粹 স্নেহ ও মমতা।

গাছটি কেবল তার ফল বা ছায়া দিয়েই থেমে থাকেনি। সে ছেলেটির প্রয়োজনে তার ডালপালা, এমনকি নিজের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি—তার কাণ্ডটিও বিলিয়ে দিয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে একটি গুঁড়িতে পরিণত হওয়ার পরেও তার কোনো আক্ষেপ ছিল না।

গাছটির মহত্ত্বের সবচেয়ে বড় দিক হলো, সে ত্যাগ করে কষ্ট পায়নি, বরং আনন্দ পেয়েছে। ছেলেটিকে সাহায্য করতে পারার মাঝেই সে নিজের সুখ খুঁজে নিত। নিজেকে নিঃস্ব করে দিয়েও অন্যের জীবনকে সমৃদ্ধ করার এই অনুভূতিই হলো মহত্ত্বের মূল ভিত্তি।


নিজের আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকার পরেও, বৃদ্ধ ও ক্লান্ত ছেলেটি যখন ফিরে আসে, তখন গাছটি তাকে নিজের গুঁড়িতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার আশ্রয় দেয়। এই अंतिम সেবাটুকুও সে পরম মমতায় প্রদান করে।

এই গল্পে আমগাছটির চরিত্রটি দেখায় যে, প্রকৃত মহত্ত্ব প্রতিদান বা স্বীকৃতির আশায় থাকে না। অন্যের খুশির জন্য নীরবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। এভাবেই গল্পটি আত্মত্যাগের মহিমাকে এক চিরন্তন রূপ দিয়েছে।

প্রশ্ন ৫
ক. আমগাছের সারা শরীর খুশিতে নেচে উঠেছিল কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয়জনের মুখ দেখলে মনে যে আনন্দের ঢেউ ওঠে, "একটি সুখী গাছের গল্প"–এ আমগাছটির শারীরিক réactions সেই গভীর অনুভূতিরই প্রতীকী প্রকাশ। বহু দিন পর ছেলেটিকে পুনরায় কাছে পেয়ে গাছটির সারা শরীর খুশিতে নেচে উঠেছিল, কারণ ছেলেটির উপস্থিতিই ছিল তার জীবনের একমাত্র আনন্দ এবং তার অস্তিত্বের সার্থকতা।

বিস্তারিত আলোচনা: ছেলেটি বড় হয়ে যাওয়ার পর আমগাছের কাছে তার আসা-যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। সে কেবল প্রয়োজনের তাগিদেই আসত এবং কাজ মিটে গেলে আবার চলে যেত। দীর্ঘ সময় ধরে ছেলেটিকে দেখতে না পেয়ে গাছটি বিষণ্ণ ও একাকী হয়ে পড়েছিল। তার জীবন ছিল ছেলেটির স্মৃতি এবং তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আবদ্ধ।

অনেক দিন পর, ছেলেটি যখন তার আমগুলো নিয়ে চলে গিয়েছিল, তখন গাছটি আবার একা হয়ে পড়ে। সেই নিঃসঙ্গতার দীর্ঘ সময় পার করে ছেলেটি যখন আবার তার কাছে ফিরে আসে, তখন গাছটির আনন্দ বাঁধ মানে না। প্রিয় সন্তানকে বহুদিন পর কাছে পেলে মায়ের যেমন অনুভূতি হয়, গাছটির অনুভূতিও ছিল ঠিক তেমনই। ছেলেটির আগমন তার নিঃসঙ্গ জীবনে আনন্দের জোয়ার নিয়ে এসেছিল। সেই অনাবিল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই গাছটির সারা শরীর খুশিতে নেচে উঠেছিল। এই শারীরিক প্রকাশ আসলে তার অভ্যন্তরীণ উচ্ছ্বাসেরই প্রতিচ্ছবি। ছেলেটির সংস্পর্শই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া, তাই তার পুনরাগমনে গাছটির আনন্দিত হওয়া ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক ও গভীর।

খ. 'একটি সুখী গাছের গল্প' গল্পের ছেলেটির চরিত্র মূল্যায়ন করো।
উত্তর:
"একটি সুখী গাছের গল্প"–এর ছেলেটির চরিত্রটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী এবং মানবচরিত্রের এক জটিল প্রতিচ্ছবি। তাকে একদিকে যেমন স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক মনে হয়, তেমনই অন্যদিকে সে মানবজীবনের স্বাভাবিক চাহিদা ও সীমাবদ্ধতার এক জীবন্ত প্রতীক। তার চরিত্রটিকে কেবল ভালো বা মন্দের ছাঁচে ফেলা যায় না, বরং এটি মানব অস্তিত্বের এক বহুমাত্রিক রূপকে তুলে ধরে।
চরিত্র মূল্যায়ন: ছেলেটির চরিত্রটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা যায়:
শৈশবের সরলতা: ছোটবেলায় ছেলেটি ছিল সরল ও নির্মল। গাছটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল純粹 ভালোবাসার। এই পর্যায়ে সে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম ছিল এবং তার কোনো জাগতিক চাহিদা ছিল না।

ক্রমবর্ধমান স্বার্থপরতা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির চরিত্রে স্বার্থপরতার দিকটি প্রকট হতে থাকে। সে গাছটিকে ভালোবাসার পরিবর্তে প্রয়োজনের উৎস হিসেবে দেখতে শুরু করে। টাকা, বাড়ি, নৌকা—তার চাহিদার তালিকা বাড়তেই থাকে এবং সে নির্দ্বিধায় গাছটির কাছ থেকে সবকিছু গ্রহণ করে, কিন্তু বিনিময়ে সঙ্গ বা ভালোবাসা দেওয়ার কথা ভাবে না। সে গাছটির আত্মত্যাগকে 당연 বলে ধরে নেয়, যা মানবচরিত্রের এক সাধারণ দুর্বলতা।
প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র: ছেলেটির চরিত্রটি আসলে সমগ্র মানবজাতিরই এক প্রতীকী রূপ। মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে নিঃশর্তভাবে সবকিছু গ্রহণ করে—তার সম্পদ, তার আশ্রয়। কিন্তু প্রায়শই সে প্রকৃতির প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকে এবং তার অবদানকে ভুলে যায়। ছেলেটিও ঠিক সেভাবেই গাছটির অবদানকে ভুলে গিয়েছিল।

শেষবেলার প্রত্যাবর্তন: তবে গল্পের শেষে বৃদ্ধ বয়সে তার গাছটির কাছে ফিরে আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ। জীবনের সব চাহিদা পূরণ হওয়ার পর, ক্লান্ত ও নিঃস্ব অবস্থায় সে তার শৈশবের আশ্রয়েই ফিরে আসে। এটি প্রমাণ করে যে, তার অবচেতন মনে গাছটির প্রতি এক গভীর টান ও নির্ভরতা ছিল। এই প্রত্যাবর্তন তার চরিত্রের প্রায়শ্চিত্ত বা উপলব্ধির এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত বহন করে।

সামগ্রিকভাবে, ছেলেটির চরিত্রটি মানবজীবনের বাস্তবতার এক নিখুঁত চিত্রণ। সে স্বার্থপর হলেও তার মধ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে জীবনের চাহিদা মানুষকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, যদিও অন্তরের গভীরে সেই টান চিরকাল থেকে যায়।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.