সুখী মানুষ
১. দিনমজুর কাশেম সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটে। দিনশেষে যা রোজগার হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফেরে। তার ঘরে দামি আসবাবপত্র নেই, জমানো টাকা নেই। রাতে চোর-ডাকাতের কোনো ভয় তাকে স্পর্শ করে না। সে মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ে। সে মনে করে, তার চেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ নেই।
ক. কবিরাজ কী সংগ্রহ করতে বলেছিল? ১
খ. “জামার নিচে শান্তি থাকে না”— কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. উদ্দীপকের কাশেমের সাথে ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার কোন চরিত্রের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “পার্থিব সম্পদের অভাবই কাশেম ও উক্ত চরিত্রটিকে প্রকৃত সুখী করেছে”— মন্তব্যটি বিচার করো। ৪
উত্তর:
ক. কবিরাজ মোড়লের সুস্থতার জন্য একজন ‘সুখী মানুষের জামা’ বা ফতুয়া সংগ্রহ করতে বলেছিল।
খ. নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমদ এই নাটিকায় বোঝাতে চেয়েছেন যে, সুখ কোনো পোশাক বা বাহ্যিক বস্তুর মধ্যে থাকে না। সাধারণত আমরা মনে করি ভালো পোশাক বা বিলাসিতায় শান্তি আছে, কিন্তু প্রকৃত শান্তি থাকে মানুষের মনের ভেতরে। অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বা দামি জামা গায়ে দিলেই মানুষ সুখী হয় না। মানসিক তৃপ্তি ও সততার মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নিহিত— এই ভাবার্থটিই এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
গ. উদ্দীপকের কাশেমের সাথে ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার কাঠুরিয়া বা ‘লোক’ চরিত্রটির মিল পাওয়া যায়।
নাটিকার কাঠুরিয়া একজন দরিদ্র মানুষ। সে বনে কাঠ কাটে এবং তা বাজারে বিক্রি করে যা পায় তা দিয়েই তার দিন চলে। তার ঘরে সোনাদানা বা চোরের ভয় করার মতো কোনো সম্পদ নেই। তাই সে পরম শান্তিতে ঘুমায় এবং নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করে।
উদ্দীপকের কাশেমও একজন দিনমজুর। তারও সঞ্চিত কোনো অর্থ বা সম্পদ নেই। সে-ও কাঠুরিয়ার মতোই দিন আনে দিন খায় এবং চোর-ডাকাতের ভয়হীন এক নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করে। উভয় চরিত্রই দারিদ্র্যের মধ্যেও নির্লোভ এবং অল্পে তুষ্ট থাকার কারণে মানসিক প্রশান্তিতে আছে। তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি ও মানসিকতা একই সূত্রে গাঁথা।
ঘ. উদ্দীপকের কাশেম এবং নাটিকার কাঠুরিয়া চরিত্রের সুখের মূল কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ।
‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় মোড়ল এবং অন্যান্য গ্রামবাসীরা অসুখী কারণ তাদের চাহিদার শেষ নেই। ধনী আরও ধন চায়, সম্পদশালীরা চোরের ভয়ে তটস্থ থাকে। এই অতৃপ্তিই তাদের দুঃখের কারণ। কিন্তু কাঠুরিয়ার কিছুই নেই, এমনকি গায়ের জামাও নেই। হারাবার ভয় নেই বলেই সে ‘সুখের রাজা’।
ঠিক একইভাবে উদ্দীপকের কাশেমের ঘরেও দামি আসবাব বা জমানো টাকা নেই। পার্থিব সম্পদ নেই বলেই তার কোনো পিছুটান বা দুশ্চিন্তা নেই। লোভহীনতা এবং স্বল্পে তুষ্ট থাকার মানসিকতাই তাদের প্রকৃত সুখ দিয়েছে। জাগতিক মোহমায়া ত্যাগ করতে পেরেছে বলেই তারা শান্তির ঘুমে ঘুমাতে পারে।
তাই বলা যায়, সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে, আর নির্লোভ ও নিরাভরণ জীবন মানুষকে প্রকৃত সুখের সন্ধান দেয়। কাশেম ও কাঠুরিয়ার ক্ষেত্রে পার্থিব সম্পদের অভাবই তাদের দুশ্চিন্তামুক্ত ও সুখী করেছে।
No comments
Thank you, best of luck