দ্য ঈগল মাইন্ডসেট বই অবলম্বনে- 'দ্য ঈগল মাইন্ডসেট দ্য ঈগল মাইন্ডসেট: যে মানসিকতা আপনাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলবে'
'দ্য ঈগল মাইন্ডসেট দ্য ঈগল মাইন্ডসেট: যে মানসিকতা আপনাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলবে'
কেমন আছেন সবাই? আচ্ছা, একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, পাখিদের রাজ্যে হাজারো সুন্দর আর শক্তিশালী পাখি থাকতে একমাত্র ঈগলকেই কেন 'পাখিদের রাজা' বলা হয়?
সিংহের গায়ের জোর আছে, তাই সে বনের রাজা। কিন্তু ঈগল? ঈগল রাজা তার মানসিকতার জন্য। যাকে আমরা বলি- `দ্য ঈগল মাইন্ডসেট' ।
আজ আপনাদের সাথে কোনো তাত্ত্বিক জ্ঞান বা ভারী কোনো দর্শন নিয়ে কথা বলব না। আজ কথা বলব আপনার জীবন নিয়ে। কারণ, আমরা অনেকেই জীবনের এমন একটা পর্যায়ে আছি যেখানে মনে হয়—আমরা আটকে গেছি, বা আমাদের দিয়ে আর হবে না। ঠিক এই মুহূর্তটিতেই আপনার দরকার ঈগলের সেই দৃষ্টিভঙ্গি, যা আপনাকে মাটির কাছাকাছি থাকা ভিড় থেকে তুলে আকাশের উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
চলুন, ঈগলের জীবন থেকে নেওয়া ৫টি এমন শিক্ষার কথা বলি, যা আপনার চিন্তার জগতকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
১. লক্ষ্য যখন পাখির চোখের মতো (লেজার ফোকাস)
ঈগল যখন আকাশে ৫ কিলোমিটার উঁচুতে ওড়ে, তখনও সে মাটিতে থাকা তার ছোট্ট শিকারকে স্পষ্টভাবে দেখতে পায়। লক্ষ্য স্থির করার পর, পৃথিবীর কোনো কিছুই তার চোখ সরাতে পারে না।
এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন—আপনার জীবনের লক্ষ্য কি এতটাই পরিষ্কার? নাকি সকালে এক কথা ভাবেন আর বিকেলে আরেক সিদ্ধান্ত নেন? আমাদের সমস্যা কি জানেন? আমরা লক্ষ্য ঠিক করি, কিন্তু ফোকাস রাখতে পারি না। ছোটখাটো সমস্যা বা লোকের কথায় আমাদের মন গলে যায়। ঈগল শেখায়—"আওয়াজ বা কোলাহলের দিকে নয়, লক্ষ্যের দিকে তাকাও।"
২. ঝড় এলে পালাবেন না, উপভোগ করুন
ঝড় শুরু হলে পৃথিবীর সব পাখি বাসায় ফিরে যায়, গাছের পাতার আড়ালে লুকায়। আর ঈগল? সে তখন ডানা মেলে দেয়! ঈগল ঝড়কে ভালোবাসে। কারণ সে জানে, ঝড়ের বাতাসের তীব্র গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে সে কোনো পরিশ্রম ছাড়াই মেঘের অনেক ওপরে উঠে যেতে পারবে।
আপনার জীবনেও ঝড় আসবে—চাকরি চলে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি, প্রিয়জনের বিচ্ছেদ। সাধারণ মানুষ এই ঝড়ে ভেঙে পড়ে। কিন্তু আপনি যদি 'ঈগল মাইন্ডসেট' ধারণ করেন, তবে আপনি বলবেন—"এই সমস্যা আমাকে ধ্বংস করতে আসেনি, আমাকে আমার সাধ্যের বাইরে নিয়ে যেতে এসেছে।" সমস্যাকে সিঁড়ি বানিয়ে ওপরে উঠতে শিখুন।
৩. ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাবেন না
একটা কথা প্রচলিত আছে—"ঈগল কখনো চড়ুই পাখির সাথে ওড়ে না।" ঈগল হয় একা ওড়ে, নয়তো তার সঙ্গী হিসেবে আরেকজন ঈগলকেই বেছে নেয়।
এর মানে কি আপনাকে অসামাজিক হতে বলছি? একদম না। এর মানে হলো, আপনার সঙ্গীরা কি স্বপ্নদ্রষ্টা? নাকি তারা সবসময় পরচর্চা আর নেতিবাচক কথা বলে সময় নষ্ট করে? মনে রাখবেন, আপনি কাদের সাথে মিশছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনি কতদূর যাবেন। যদি জীবনে বড় কিছু করতে চান, তবে নিচু মানসিকতার ভিড় থেকে বেরিয়ে আসুন। প্রয়োজনে একা চলুন, তবু মানহীন সঙ্গ দেবেন না।
৪. কমফোর্ট জোন বা আরামের আসক্তি ভাঙুন
জানেন, মা ঈগল তার সন্তানকে ওড়া শেখানোর জন্য কী করে? সে তার বাসা থেকে সব নরম পালক ফেলে দিয়ে বাসাটাকে কণ্টকাকীর্ণ বা অস্বস্তিকর করে তোলে। বাচ্চা ঈগল যখন দেখে বাসায় আর আরাম নেই, তখনই সে ওড়ার চেষ্টা করে।
আমরা মানুষরা আরাম বড় ভালোবাসি। কিন্তু সত্যটা হলো—আরামের মধ্যে কোনো 'গ্রোথ' বা উন্নতি নেই। জীবন যখন আপনাকে ধাক্কা দেয়, তখন বুঝবেন জীবন আপনাকে বাসা থেকে বের করে ওড়ার সুযোগ দিচ্ছে। কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে ঝুঁকি নিন, সেখানেই আপনার আসল শক্তি লুকিয়ে আছে।
৫. পুনর্জন্মের কষ্ট মেনে নেওয়া
ঈগলের জীবনের সবচেয়ে রোমহর্ষক অধ্যায়টি আসে তার ৪০ বছর বয়সে। তখন তার ঠোঁট ভোঁতা হয়ে যায়, নখ দুর্বল হয়ে পড়ে, ডানা ভারী হয়ে যায়। তার সামনে দুটি পথ থাকে—হয় মৃত্যু মেনে নেওয়া, নয়তো এক অসহ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া।
ঈগল পরিবর্তন বেছে নেয়। সে পাহাড়ে গিয়ে নিজের ঠোঁট পাথরে ভেঙে ফেলে, নখ উপড়ে ফেলে, পালক ছিঁড়ে ফেলে। দীর্ঘ ৫ মাসের রক্তক্ষরণ আর যন্ত্রণার পর সে নতুন ডানা আর ঠোঁট পায়। এই 'পুনর্জন্ম' তাকে আরও ৩০ বছর বাঁচার শক্তি দেয়।
আমাদের জীবনেও এমন সময় আসে যখন মনে হয় সব শেষ। তখন আমাদেরও দরকার এই পুনর্জন্ম। নিজের পুরনো বাজে অভ্যাস, অলসতা আর অতীতকে ছুড়ে ফেলার কষ্টটা সহ্য করতে হয়। মনে রাখবেন, আজকের কষ্টই আগামীকালের নতুন 'আপনি'-কে তৈরি করবে।
শেষ কথা
আপনার জীবনটা কেমন হবে—সেটা পরিস্থিতি ঠিক করবে না, ঠিক করবে আপনার মানসিকতা। আপনি কি ঝড়ের ভয়ে পালানো চড়ুই হবেন, নাকি ঝড়কে জয় করা ঈগল হবেন—সিদ্ধান্ত আপনার।
নিচের দিকে তাকানো বন্ধ করুন। আকাশের দিকে তাকান। আপনার ডানা মেলার সময় এখনই!
No comments
Thank you, best of luck