header ads

অটোসাজেশন: জীবন বদলের চাবিকাঠি


ভূমিকা: আপনার মনের গোপন শক্তি
অটোসাজেশন হলো নিজের মনকে ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রভাবিত করার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশল। ফরাসি মনোবিজ্ঞানী এমিল কুয়ে এই পদ্ধতির জনপ্রিয় করেন। সহজ ভাষায়, এটি এক ধরনের সেলফ-হিপনোসিস বা আত্ম-সম্মোহন, যা আমাদের অবচেতন মনকে নতুন কোনো ধারণা বা বিশ্বাস গ্রহণ করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তার ধরণকে নতুন করে সাজাতে পারি। কিন্তু কেন এই সহজ কৌশলটি আমাদের জীবন পরিবর্তনে এতটা প্রভাবশালী?

১. অটোসাজেশন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আমাদের জীবনের ৯০% এরও বেশি কাজ, অভ্যাস এবং প্রতিক্রিয়া আমাদের অবচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই অবচেতন মনকে যদি আমরা সঠিক এবং ইতিবাচক নির্দেশনা দিতে পারি, তবে আমাদের আচরণ, অভ্যাস এবং এমনকি ভাগ্যও পরিবর্তন করা সম্ভব। এই কৌশলটি মূলত কয়েকটি প্রধান লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

* নেতিবাচক চিন্তা দূর করা: এটি আমাদের মনের গভীরে থাকা নেতিবাচক চিন্তার প্যাটার্নগুলোকে ভেঙে নতুন করে ইতিবাচক চিন্তার জন্ম দেয়।

* আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস দৃঢ় হয় এবং আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

* লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা: এটি মনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে স্থির রাখে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি জোগান দেয়।

তাহলে এই শক্তিশালী কৌশলটি ঠিক কীভাবে আমাদের মনের গভীরে কাজ করে?
২. এটি কীভাবে কাজ করে: আপনার মনের উর্বর জমি
অটোসাজেশনের কার্যকারিতা নির্ভর করে পুনরাবৃত্তির নীতির ওপর। যখন আমরা কোনো একটি চিন্তা বা কথা বারবার বলতে থাকি, তখন তা ধীরে ধীরে আমাদের সচেতন স্তর পার করে অবচেতন মনে গেঁথে যায়। এই প্রক্রিয়াটিকে একটি চমৎকার উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যায়।
আপনার মন একটি উর্বর জমির মতো। যেমন একটি জমিতে বারবার একই বীজ বপন করলে একসময় তা থেকে ফসল উৎপন্ন হয়, ঠিক তেমনি ইতিবাচক চিন্তা বা ধারণা যদি বারবার মনের জমিতে বপন করা হয়, তাহলে তা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে আপনি এই কৌশলটি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।
৩. অটোসাজেশন অনুশীলন করার পদ্ধতি
এই কৌশলটি অনুশীলন করার জন্য চারটি সহজ ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
1. ইতিবাচক কথা বাছাই করুন: প্রথমে একটি ছোট, সহজ এবং সম্পূর্ণ ইতিবাচক বাক্য তৈরি করুন যা আপনার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাক্যটি অবশ্যই বর্তমান কালের এবং ইতিবাচক হতে হবে। যেমন এমিল কুয়ে-র বিখ্যাত উক্তি: "দিন দিন, সবদিক থেকে, আমি আরও ভালো হচ্ছি।"
2. আরাম করুন: একটি শান্ত ও নিরিবিলি জায়গায় আরাম করে বসুন। চোখ বন্ধ করে শরীর ও মনকে সম্পূর্ণ শিথিল করুন। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মনকে শান্ত করুন।
3. পুনরাবৃত্তি করুন: এবার আপনার বাছাই করা বাক্যটি মনে মনে অথবা মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে ২০ বার বলতে থাকুন। এই অনুশীলনটি সকালে ঘুম থেকে ওঠার ঠিক পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে করা সবচেয়ে কার্যকর।
4. বিশ্বাস করুন: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার মনে যদি কোনো রকম সন্দেহ বা অবিশ্বাস থাকে, তবে এই কৌশলটি কাজ করবে না। আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, যা আপনি বলছেন তা সত্যি হচ্ছে। বিশ্বাসই এই কৌশলের মূল শক্তি।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি অটোসাজেশনের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারেন।
৪. শেষ কথা: এটি জাদু নয়, একটি মানসিক কৌশল
মনে রাখবেন, অটোসাজেশন কোনো জাদু বা অলৌকিক সমাধান নয়; এটি একটি প্রমাণিত মানসিক কৌশল। এর কার্যকারিতা রাতারাতি দেখা যায় না। এর সাফল্য সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের ওপর:
* ধৈর্য: ফল পেতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।
* বিশ্বাস: নিজের ওপর এবং এই প্রক্রিয়ার ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে।
* নিয়মিত অনুশীলন: প্রতিদিন নিয়ম করে অনুশীলন করা অপরিহার্য।
এই শক্তিশালী মানসিক হাতিয়ারটি ব্যবহার করে আপনিও আপনার জীবনকে ইতিবাচক দিকে চালিত করার যাত্রা শুরু করতে পারেন।

No comments

Thank you, best of luck

Theme images by sbayram. Powered by Blogger.