‘সাত ভাই চম্পা’ গল্প অবলম্বেনে ছোটো রানি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের 'সাত ভাই চম্পা' রূপকথার অন্যতম প্রধান ও মর্মস্পর্শী চরিত্র হলো ছোটো রানি। ছোটো রানি একজন শান্ত, সরল ও স্নেহপ্রবণ নারী। যাকে রাজা খুব ভালোবাসতেন। রাজার এই অতিরিক্ত ভালোবাসাই বড়ো রানিদের মনে হিংসার জন্ম দেয় এবং ছোটো রানি সেই ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তাঁর চরিত্রটি গল্পের মূল সংঘাতের সূচনা করে এবং তাঁর জীবনের দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়েই কাহিনি এগিয়ে যায়।
ছোটো রানি চরিত্রটি মূলত ষড়যন্ত্র, সহনশীলতা ও матери সত্তার এক অনবদ্য প্রতিচ্ছবি। বড়ো রানিদের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি তাঁর সাত পুত্র ও এক কন্যাকে হারান এবং রাজার চোখে অপরাধী সাব্যস্ত হন। রাজপুরী থেকে বিতাড়িত হয়ে 'ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী'র জীবনযাপনে বাধ্য হলেও তিনি নীরবে সমস্ত অপমান ও কষ্ট সহ্য করেন। তাঁর এই অসীম ধৈর্য এবং দুঃখ বরণের ক্ষমতা তাঁকে এক মহৎ চরিত্রে পরিণত করেছে। তাঁর চরিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হলো তাঁর গভীর মাতৃত্ব। বহু বছর পর, ছেঁড়া পোশাকে থেকেও যখন তাঁর সন্তানেরা তাঁকে 'মা' বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তাঁর মাতৃসত্তা পূর্ণতা লাভ করে এবং তাঁর সমস্ত কষ্ট সার্থক হয়। সবশেষে, রাজা সত্য জানতে পেরে বড়োরানিদের শাস্তি দেন এবং ছোটো রানিকে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে রাজপ্রাসাদে ফিরিয়ে আনেন।
পরিশেষে বলা যায়, ছোটো রানি কেবলই একজন অসহায় নারী নন, বরং তিনি সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক। তাঁর জীবনের চরম দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন যে, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। অবশেষে সন্তানদের ফিরে পেয়ে এবং নিজের সম্মান পুনরুদ্ধার করে তিনি গল্পের আখ্যানকে একটি সুন্দর ও চমৎকার সমাপ্তি দিয়েছেন। তাঁর চরিত্রটি রূপকথার সেই চিরন্তন বাণীকেই প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে শুভশক্তির কাছে অশুভ শক্তি পরাজিত হয় এবং ধৈর্য ও সততার জয় হয়।
No comments
Thank you, best of luck