‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা 'সাত ভাই চ¤পা' শুধু একটি সাধারণ রাজারানির গল্প নয়, এটি আসলে অন্যায়-অবিচার, হিংসা এবং তার বিরুদ্ধে সত্য ও ধৈর্যের জয়ের এক অসাধারণ রূপকথা। এখানে মিথ্যার পরাজয় আর সততার জয় হয়েছে।
এক রাজার সাতজন রানি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছোটো রানি ছিলেন খুব শান্ত আর ভালো মানুষ, তাই রাজা তাঁকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। রাজার এই ভালোবাসা বড়ো রানিদের মনে হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এই হিংসা এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ নেয় যে, যখন ছোটো রানির সাতটি ফুটফুটে ছেলে আর একটি মিষ্টি মেয়ে জন্মায়, তখন বড়ো রানিরা এক নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র করে। তারা রাজাকে বারবার মিথ্যে খবর দিয়ে হয়রান করে এবং শেষে ফুলের মতো সুন্দর বাচ্চাগুলোকে লুকিয়ে পাশগাঁদায় পুঁতে রেখে রাজাকে দেখায় কতগুলো ইঁদুর আর ব্যাঙের ছানা। তাদের এই মিথ্যার কারণে রাজা প্রচণ্ড রেগে যান এবং কোনো কিছু বিচার না করেই তাঁর প্রিয় ছোটো রানিকে রাজ্য থেকে বের করে দেন। বেচারি রানিকে তখন 'ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী' হয়ে পথে পথে ঘুরতে হয়। এ গল্পে দেখা যায়- হিংসা মানুষের বিবেককে কতটা নষ্ট করে দিতে পারে এবং নিরপরাধ মানুষকে কতটা কষ্ট দিতে পারে। এর পর বড়ো রানিরা যে সাতটি ছেলে আর একটি মেয়েকে মাটির নিচে পাশগাঁদায় পুঁতে দিয়েছিল, তারা মরে না গিয়ে সাতটি চাঁপা ফুল আর একটি পারুল ফুল হয়ে ফুটে ওঠে। এই ফুলগুলো সাধারণ ফুল ছিল না; তারা কথা বলতে পারত। যখনই কেউ তাদের ছিঁড়তে যেত, তারা বলত, "না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূর"। তারা একে একে রাজা, বড়ো রানি, মেজো রানিসহ সবাইকে ডাকায়, কিন্তু কাউকেই ফুল দেয় না। এভাবেই ফুলগুলো ধীরে ধীরে সবার সামনে বড়ো রানিদের করা অন্যায়ের পর্দা ফাঁস করে দেয়। গল্পের শেষে আমরা দেখি, ফুলগুলো কেবল তাদের মা, সেই দুঃখিনী 'ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী'র ডাকেই সাড়া দেয়। মা যখন তাদের কাছে আসেন, তখন ফুলগুলো আবার আগের মতো রাজপুত্র আর রাজকন্যা হয়ে তাঁর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই দৃশ্য দেখে রাজা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং বড়ো রানিদের কঠিন শাস্তি দেন। ছোটো রানি তাঁর সন্তানসহ আবার রাজপ্রাসাদে ফিরে সসম্মানে ফিরে আসেন এবং রাজ্যে সুখ-শান্তি ফিরে আসে।
এই গল্প আমরা বুঝতে পারি- মিথ্যা দিয়ে সাময়িকভাবে জয়ী হওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। অন্যায়কারীরা একদিন শাস্তি পায়ই। আর ছোটো রানির চরিত্র আমাদের শেখায় যে, চরম দুঃখ ও অপমানের মধ্যেও ধৈর্য ধরে থাকলে এবং সৎ পথে থাকলে একদিন না একদিন তার ভালো ফল পাওয়া যায়। পরিশেষে বলা যায়- মানুষের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ কারে সাময়িক জয় হলেও সত্য একদিন প্রকাশ পায়-ই।
পতিতপাবন মণ্ডল
বাংলা বিভাগীয় প্রধান,
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঢাকা।
No comments
Thank you, best of luck