প্রবন্ধ রচনা।। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ (Global Warming) ।। নবম-দশম শ্রেণি।। বাংলা দ্বিতীয় পত্র।।
ভূমিকা:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এতে বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত ১০০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ, বায়ুমণ্ডল এবং মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বোঝায়। শিল্প বিপ্লবের পর এ উষ্ণতা বৃদ্ধি শুরু হলেও উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে উষ্ণতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে উষ্ণতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে উষ্ণতা বৃদ্ধি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা Global Warming শব্দটি বিজ্ঞানী Wallace Broecker সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বিখ্যাত Science জার্নালে Global Warming শব্দদ্বয় উচ্চারণ করে বিষয়টির অবতারণা করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে National Academy of Science তাদের Chamey Report নামে পরিচিত গবেষণাপত্রে Global Warming শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ:
সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবীপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এ বিকিরিত তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। আবহাওয়ামণ্ডলে 'ওজোন স্তর' নামে অদৃশ্য এক বেষ্টনী বিদ্যমান, যা পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুণি রশ্মি প্রবেশ রোধ করে এবং সূর্য থেকে আসা তাপ মহাশূন্যে পুনরায় ফিরে যেতে সহায়তা করে। কিন্তু মানব সৃষ্ট দূষণ ও বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি প্রদত্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি পণ্য যেমন-ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC) গ্যাস। এ অবমুক্ত CFC মহাশূন্যের ওজোন স্তর ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। এছাড়া গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া প্রভৃতি থেকে ক্রমবর্ধমান হারে নির্গত হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস। এভাবে একদিকে ওজোন স্তরের ক্ষয়জনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত তাপ সঞ্চিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে উত্তপ্ত। গবেষণায় দেখা যায়, ১৮৫০-১৯০০ এই সময়কালের চেয়ে ২০১১-২০২০ এই এক দশকে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে প্রভাব:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবসমূহ হলো:
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি:
বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি সম্ভাব্য পরিণতি হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে সমুদ্রের পানির উত্তাপ বৃদ্ধি পায় এবং পানি সম্প্রসারিত হয়ে সমূদ্রের আয়তন ও পরিধিকে বাড়িয়ে তোলে। উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়, উত্তর ও দক্ষিণমেরুর গ্রিনল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকাসহ অন্যান্য ভূ-ভাগের বরফ গলে যাবে, যা সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলবে। বঙ্গোপসাগরের সাথে বাংলাদেশের ৭১১ কিমি দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) এর গবেষণা মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের প্রায় ১৭-২০% পর্যন্ত ভূমি সমুদ্র গর্ভে তরিয়ে যাবে। এতে প্রায় ২.৫ কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। নাসার একটি গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি:
পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি দেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। লবণাক্ত পানিতে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ফসলের গুণগত মান পরিবর্তিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ও দূরবর্তী দীপসমূহের অনেক এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করায় উন্মুক্ত জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে এ লবণাক্ততার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত নদ-নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অধিক পরিমাণে লোনা পানি প্রবেশ করবে। ভূগর্ভস্থ পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি উপকূলীয় পরিবেশকে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মরুভূমির বৈশিষ্ট্য:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন পৃথিবীর নিচু এলাকাসমূহ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, তেমনি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দেবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভূ-পৃষ্ঠে পানির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাবে। ফলে সমগ্র ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হবে। এর ফলে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহতসহ তা দেশের অর্থনীতিতে নৈতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রোগ-ব্যাধি:
উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসার ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন প্রকারের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয়। ক্যান্সর, চর্মরোগসহ নানা ধরনের নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটে।
নদ-নদীর প্রভাব হ্রাস:
বাংলাদেশ নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান দেশ। জমিতে সেচ ও নৌ-চলাচলের জন্য নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রধান প্রধান নদীর প্রবাহ হ্রাস পাবে এবং নদীর ক্ষীণ প্রবাহের কারণে সামুদ্রিক লোনা পানি সহজে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপ্রবাহে প্রবেশ করে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। সামুদ্রিক লোনা পানি উজান অঞ্চলে প্রবেশ করায় কৃষিতে প্রয়োজনীয় মৃদু পানির অভাব দেখা দেবে এবং দেশের সম্পদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হবে।
সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস:
সাধারণত সামুদ্রিক ঝড় সৃষ্টি হয় উত্তপ্ত বায়ু ও ঘূর্ণিবায়ু থেকে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পেছনে অন্যান্য প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকলেও পানির উত্তাপ বৃদ্ধিই মূল কারণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর মে-জুন মাসে যে সামুদ্রিক ঝড় হয় তাতে উপকূলীয় জলাসমূহে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতাও বেড়ে যাবে।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংস:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রভাবে বনাঞ্চলসমূহ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী বিলুপ্তির পথে, কারণ এ পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির আবাসস্থল এ সুন্দরবন। পরিবেশ ও ভূবিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের ৭০ ভাগ তলিয়ে যাবে। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাস্তুসংস্থানের বিপর্যয় ঘটলে তা মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হবে।
খরা:
মাটিতে আর্দ্রতার অভাব অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে খরা দেখা দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা যার প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বর্ষাকালে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির অভাবে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনও ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। শীতকালেও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের হার বেশি। এর ফলে মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে খরার প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমানের মাঝারি ধরনের খরা উপদ্রুপ এলাকা মারাত্মক খরা উপদ্রুত এলাকায় পরিণত হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে আমাদের করণীয়:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ব ও মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূ-প্রাকৃতিক অবকাঠামো বাংলাদেশকে যতটা কুফলভোগী করেছে এ সংকট সৃষ্টিতে আমাদের দেশের ভূমিকা শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় খুবই নগণ্য। এখনই সময় এ সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে আমাদের যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে তা হলো:
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস:
কল-কারখানা, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছুতেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ কম হয়। পরিবেশ সহায়ক জ্বালানি যেমন- সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, বায়োডিজেল, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, আবর্জনা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, নিউক্লিয়ার এনার্জি প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
রাসায়নি সারের ব্যবহার হ্রাস:
কৃষিতে নাইট্রোজেন সার (যেমন ইউরিয়া) ব্যবহারের ফলে বাড়ছে নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ। অবিলম্বে কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে হবে।
মিথেন নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস:
গাছপালার পচন এবং জীবজন্তুদের বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিথেনের এই সকল উৎসগুলোকে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পরিকল্পিত বনায়ন:
ব্যাপকভাবে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ও নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে বনায়ন কর্মসূচি শুরু করতে হবে। ফলে নদী ভাঙন ও সামুদ্রিক ঝড়ের তীব্রতা কমে যাবে। বৃক্ষনিধন রোধ করতে হবে। কারণ বৃক্ষই প্রকৃতি থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গমন করে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। একদিকে অরণ্যচ্ছেদন রোধ ও অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে বনায়নের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর দ্রুত বাস্তব রূপায়ণ:
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে দরকার পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন। কেবল আলাপ-আলোচনা নয়, দরকার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন।
নতুন প্রযুক্তি:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে দরকার পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত উপাদান পরিবর্তন, যানবাহনের দক্ষতা বৃদ্ধি, কার্বন ডাই-অক্সাইড পৃথকীকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রভৃতিসহ বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহার:
একবিংশ শতাব্দীতে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে ঠিক তখনই মানুষ তার পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে চরম বিপর্যয়ের দিকে। মানুষ একদিকে যেমন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করছে অপরদিকে পরিবেশকে করে তুলছে বিষাক্ত। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং পরিবেশের ভারসাম্য দ্রুত বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিশ্ব আমাদেরই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
উপরের ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ’- বিষয়ক রচনা/প্রবন্ধটির সকল পয়েন্ট ঠিক রেখে ১০০০ শব্দে লেখো।
তথ্য-উপাত্ত ঠিক রেখে লিখবে।
প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক নতুন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা যাবে
পয়েন্ট পরিবর্তন করা যাবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এতে বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত ১০০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ, বায়ুমণ্ডল এবং মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বোঝায়। শিল্প বিপ্লবের পর এ উষ্ণতা বৃদ্ধি শুরু হলেও উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে উষ্ণতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে উষ্ণতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে উষ্ণতা বৃদ্ধি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা Global Warming শব্দটি বিজ্ঞানী Wallace Broecker সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বিখ্যাত Science জার্নালে Global Warming শব্দদ্বয় উচ্চারণ করে বিষয়টির অবতারণা করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে National Academy of Science তাদের Chamey Report নামে পরিচিত গবেষণাপত্রে Global Warming শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ:
সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবীপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এ বিকিরিত তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। আবহাওয়ামণ্ডলে 'ওজোন স্তর' নামে অদৃশ্য এক বেষ্টনী বিদ্যমান, যা পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুণি রশ্মি প্রবেশ রোধ করে এবং সূর্য থেকে আসা তাপ মহাশূন্যে পুনরায় ফিরে যেতে সহায়তা করে। কিন্তু মানব সৃষ্ট দূষণ ও বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি প্রদত্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি পণ্য যেমন-ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC) গ্যাস। এ অবমুক্ত CFC মহাশূন্যের ওজোন স্তর ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। এছাড়া গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া প্রভৃতি থেকে ক্রমবর্ধমান হারে নির্গত হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস। এভাবে একদিকে ওজোন স্তরের ক্ষয়জনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত তাপ সঞ্চিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে উত্তপ্ত। গবেষণায় দেখা যায়, ১৮৫০-১৯০০ এই সময়কালের চেয়ে ২০১১-২০২০ এই এক দশকে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে প্রভাব:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবসমূহ হলো:
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি:
বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি সম্ভাব্য পরিণতি হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে সমুদ্রের পানির উত্তাপ বৃদ্ধি পায় এবং পানি সম্প্রসারিত হয়ে সমূদ্রের আয়তন ও পরিধিকে বাড়িয়ে তোলে। উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়, উত্তর ও দক্ষিণমেরুর গ্রিনল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকাসহ অন্যান্য ভূ-ভাগের বরফ গলে যাবে, যা সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলবে। বঙ্গোপসাগরের সাথে বাংলাদেশের ৭১১ কিমি দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) এর গবেষণা মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের প্রায় ১৭-২০% পর্যন্ত ভূমি সমুদ্র গর্ভে তরিয়ে যাবে। এতে প্রায় ২.৫ কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। নাসার একটি গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি:
পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি দেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। লবণাক্ত পানিতে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ফসলের গুণগত মান পরিবর্তিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ও দূরবর্তী দীপসমূহের অনেক এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করায় উন্মুক্ত জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে এ লবণাক্ততার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত নদ-নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অধিক পরিমাণে লোনা পানি প্রবেশ করবে। ভূগর্ভস্থ পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি উপকূলীয় পরিবেশকে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মরুভূমির বৈশিষ্ট্য:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন পৃথিবীর নিচু এলাকাসমূহ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, তেমনি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দেবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভূ-পৃষ্ঠে পানির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাবে। ফলে সমগ্র ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হবে। এর ফলে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহতসহ তা দেশের অর্থনীতিতে নৈতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রোগ-ব্যাধি:
উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসার ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন প্রকারের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয়। ক্যান্সর, চর্মরোগসহ নানা ধরনের নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটে।
নদ-নদীর প্রভাব হ্রাস:
বাংলাদেশ নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান দেশ। জমিতে সেচ ও নৌ-চলাচলের জন্য নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রধান প্রধান নদীর প্রবাহ হ্রাস পাবে এবং নদীর ক্ষীণ প্রবাহের কারণে সামুদ্রিক লোনা পানি সহজে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপ্রবাহে প্রবেশ করে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। সামুদ্রিক লোনা পানি উজান অঞ্চলে প্রবেশ করায় কৃষিতে প্রয়োজনীয় মৃদু পানির অভাব দেখা দেবে এবং দেশের সম্পদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হবে।
সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস:
সাধারণত সামুদ্রিক ঝড় সৃষ্টি হয় উত্তপ্ত বায়ু ও ঘূর্ণিবায়ু থেকে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পেছনে অন্যান্য প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকলেও পানির উত্তাপ বৃদ্ধিই মূল কারণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর মে-জুন মাসে যে সামুদ্রিক ঝড় হয় তাতে উপকূলীয় জলাসমূহে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতাও বেড়ে যাবে।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংস:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রভাবে বনাঞ্চলসমূহ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী বিলুপ্তির পথে, কারণ এ পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির আবাসস্থল এ সুন্দরবন। পরিবেশ ও ভূবিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের ৭০ ভাগ তলিয়ে যাবে। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাস্তুসংস্থানের বিপর্যয় ঘটলে তা মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হবে।
খরা:
মাটিতে আর্দ্রতার অভাব অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে খরা দেখা দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা যার প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বর্ষাকালে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির অভাবে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনও ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। শীতকালেও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের হার বেশি। এর ফলে মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে খরার প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমানের মাঝারি ধরনের খরা উপদ্রুপ এলাকা মারাত্মক খরা উপদ্রুত এলাকায় পরিণত হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে আমাদের করণীয়:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ব ও মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূ-প্রাকৃতিক অবকাঠামো বাংলাদেশকে যতটা কুফলভোগী করেছে এ সংকট সৃষ্টিতে আমাদের দেশের ভূমিকা শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় খুবই নগণ্য। এখনই সময় এ সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে আমাদের যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে তা হলো:
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস:
কল-কারখানা, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছুতেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ কম হয়। পরিবেশ সহায়ক জ্বালানি যেমন- সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, বায়োডিজেল, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, আবর্জনা থেকে প্রাপ্ত শক্তি, নিউক্লিয়ার এনার্জি প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
রাসায়নি সারের ব্যবহার হ্রাস:
কৃষিতে নাইট্রোজেন সার (যেমন ইউরিয়া) ব্যবহারের ফলে বাড়ছে নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ। অবিলম্বে কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে হবে।
মিথেন নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস:
গাছপালার পচন এবং জীবজন্তুদের বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিথেনের এই সকল উৎসগুলোকে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পরিকল্পিত বনায়ন:
ব্যাপকভাবে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ও নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে বনায়ন কর্মসূচি শুরু করতে হবে। ফলে নদী ভাঙন ও সামুদ্রিক ঝড়ের তীব্রতা কমে যাবে। বৃক্ষনিধন রোধ করতে হবে। কারণ বৃক্ষই প্রকৃতি থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গমন করে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। একদিকে অরণ্যচ্ছেদন রোধ ও অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে বনায়নের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর দ্রুত বাস্তব রূপায়ণ:
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে দরকার পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন। কেবল আলাপ-আলোচনা নয়, দরকার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন।
নতুন প্রযুক্তি:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে দরকার পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত উপাদান পরিবর্তন, যানবাহনের দক্ষতা বৃদ্ধি, কার্বন ডাই-অক্সাইড পৃথকীকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রভৃতিসহ বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহার:
একবিংশ শতাব্দীতে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে ঠিক তখনই মানুষ তার পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে চরম বিপর্যয়ের দিকে। মানুষ একদিকে যেমন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করছে অপরদিকে পরিবেশকে করে তুলছে বিষাক্ত। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং পরিবেশের ভারসাম্য দ্রুত বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিশ্ব আমাদেরই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
উপরের ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ’- বিষয়ক রচনা/প্রবন্ধটির সকল পয়েন্ট ঠিক রেখে ১০০০ শব্দে লেখো।
তথ্য-উপাত্ত ঠিক রেখে লিখবে।
প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক নতুন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা যাবে
পয়েন্ট পরিবর্তন করা যাবে না।
No comments
Thank you, best of luck