ভাবসম্প্রসারণ: চকচক করলেই সোনা হয় না। বাংলা দ্বিতীয় পত্র।। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম-দ্বাদশ শ্রেণি।।
বাহ্যিক রূপের ঝলকানি প্রায়শই বস্তুর প্রকৃত স্বরূপকে আড়াল করে রাখে। কোনো বস্তুর উপরিভাগের চাকচিক্য তার অন্তর্নিহিত গুণমানের পরিচায়ক নয়, ঠিক যেমন উজ্জ্বল সকল বস্তুই মূল্যবান সোনা নয়। তাই কেবল বাইরের আবরণ দেখে কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বিচার করতে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল থাকে। সত্যিকারের মূল্য যাচাই হয় গভীরে।
বস্তুজগৎ থেকে মানবসমাজ সর্বত্রই এই সত্যটি ক্রিয়াশীল। মূল্যবান সোনা যেমন তার দ্যুতির জন্য পরিচিত, তেমনই বহু সস্তা ধাতুও পালিশের গুণে সোনার মতো উজ্জ্বল দেখায়। অবিবেচক ক্রেতা সেই কৃত্রিম চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে নকলকে আসল ভেবে লোকসানের শিকার হয়। মানুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনুরূপ। সুন্দর চেহারা, দামি পোশাক আর মধুর কথার আড়ালে থাকতে পারে কলুষিত এক অন্তর। অন্যদিকে, সাদামাটা পোশাকের কোনো সাধারণ চেহারার মানুষের মাঝেও লুকিয়ে থাকতে পারে অসাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মনুষ্যত্ব। বস্তুত, মানুষের আসল পরিচয় তার পোশাকে বা বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয়, বরং তার চরিত্র, কর্ম ও চিন্তার গভীরতায় নিহিত। অসার ব্যক্তিরাই অন্তঃসারশূন্যতা ঢাকার জন্য বাইরের আড়ম্বরকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যারা জ্ঞানী ও বিচক্ষণ, তারা এই মোহজাল ভেদ করে আসল-নকলের পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন। তাই কোনো কিছুর যথার্থ মূল্যায়নের জন্য তার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি বিচার করাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- অনেক সময় মার্জিত পোশাক ও পরিশীলিত আচরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকে কপটতা ও স্বার্থপরতা। ঠিক যেমন এর বিপরীতে, জীর্ণ বস্ত্র পরিহিত কোনো সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিলতে পারে ঋষিসুলভ জ্ঞান ও মহৎপ্রাণের সন্ধান। ইতিহাসের পাতায় এমন বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে রাজার পোশাকে থাকা মানুষটি ছিল অত্যাচারী, আর ফকিরের বেশে থাকা মানুষটি বিলিয়েছেন মানবকল্যাণের আলো।
সুতরাং, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর মূল্যায়নে বাহ্যিক চাকচিক্যকে প্রাধান্য না দিয়ে বিচক্ষণতার সাথে তার ভেতরের গুণাগুণ বিচার করা উচিত। মানুষের ক্ষেত্রে তার চরিত্র ও কর্মই হলো মূল্যায়নের শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি। এই বোধ কেবল আমাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষাই করে না, বরং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এক সার্থক ও সুন্দর জীবন গঠনেও সহায়তা করে।
No comments
Thank you, best of luck