সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর।। মানুষ মুহম্মদ (স.) - মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী।। নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য।।
১. সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
উদ্দীপক:
গ্রামের প্রধান করিম সাহেব ছিলেন সকলের অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা আর ভালোবাসায় সবাই মুগ্ধ ছিল। হঠাৎ তাঁর মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে বিহ্বল হয়ে তাঁর বড় ছেলে চিৎকার করে বলতে থাকে, "আমার বাবা মরতে পারেন না, তিনি আবার ফিরে আসবেন!" তখন গ্রামের প্রবীণ ও জ্ঞানী ব্যক্তি সোবহান সাহেব এগিয়ে এসে সবাইকে শান্ত করে বলেন, "করিম সাহেব আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, এটাই সত্য। তিনি মানুষ ছিলেন, আর মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও সততার পথ আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবে। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই পথ অনুসরণ করে গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।"
প্রশ্ন:
ক. হযরত মুহম্মদ (স.)-এর বাল্যকালের উপাধি কী ছিল?
খ. "আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ মাত্র"— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সোবহান সাহেবের ভূমিকার সাথে ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. "শোকে বিহ্বল একটি জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের উক্ত বিশেষ ঘটনাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ"– মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন - ১ এর উত্তর
ক. হযরত মুহম্মদ (স.)-এর বাল্যকালের উপাধি কী ছিল?
উত্তর: হযরত মুহম্মদ (স.)-এর বাল্যকালের উপাধি ছিল ‘আল-আমিন’, যার অর্থ বিশ্বস্ত।
খ. "আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ মাত্র"— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: "আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ মাত্র"— এই উক্তিটির দ্বারা হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবীয় সত্তাকে বোঝানো হয়েছে।
হযরত মুহম্মদ (স.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল বা বার্তাবাহক হলেও তিনি কোনো অতিমানব বা ঐশ্বরিক সত্তা ছিলেন না। তিনি ছিলেন রক্ত-মাংসে গড়া একজন সাধারণ মানুষ। অন্যান্য মানুষের মতো তাঁরও দুঃখ-বেদনা, জীবন-মৃত্যু ও মানবিক অনুভূতি ছিল। তিনি যে সবার মতো একজন মানুষ এবং মৃত্যুর অধীন, এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই উক্তিটি করা হয়েছে, যাতে মানুষ তাঁকে পূজা না করে বরং তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে।
গ. উদ্দীপকের সোবহান সাহেবের ভূমিকার সাথে ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্দীপকের সোবহান সাহেবের ভূমিকার সাথে ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের হযরত আবুবকর (রা.)-এর ভূমিকার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধে হযরতের মৃত্যুর খবরে সাহাবিরা, বিশেষ করে হযরত ওমর (রা.) শোকে বিহ্বল ও আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েন। তখন স্থিতধী হযরত আবুবকর (রা.) অটল থেকে পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি জনতাকে বোঝান যে, হযরত (স.) একজন মানুষ ও রাসুল ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক। তিনি আল্লাহর অমরত্ব ও হযরতের নশ্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শোকাহত মুসলিম সমাজকে চরম বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন এবং তাদের মধ্যে চৈতন্য ফিরিয়ে আনেন।
উদ্দীপকের সোবহান সাহেবও একই রকম ভূমিকা পালন করেছেন। গ্রামের শ্রদ্ধেয় প্রধান করিম সাহেবের মৃত্যুতে তাঁর ছেলেসহ গ্রামবাসী যখন শোকে মুহ্যমান, তখন সোবহান সাহেব এগিয়ে আসেন। তিনি সবাইকে বোঝান যে, করিম সাহেব মানুষ ছিলেন এবং মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক। তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে করিম সাহেবের আদর্শকে অনুসরণ করার কথা বলেন। হযরত আবুবকর (রা.) যেমন রাসুলের মানবিক পরিচয় তুলে ধরে মুসলিমদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলেন, সোবহান সাহেবও তেমনি করিম সাহেবের মানবিক সত্তা ও নশ্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গ্রামবাসীকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এভাবেই দুজনের ভূমিকা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঘ. "শোকে বিহ্বল একটি জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধের উক্ত বিশেষ ঘটনাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ"– মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: উক্তিটি যথার্থ। প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষ শোকে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ সময় একজন স্থিতধী ও জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের সঠিক নির্দেশনা জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সঠিক পথে চালিত করতে পারে, যা উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধের ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে।
‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধে আমরা দেখতে পাই, যাঁর আদর্শে একটি জাতি গঠিত হয়েছে, সেই মহামানবের মৃত্যুতে সমগ্র মদিনায় অন্ধকার নেমে আসে। সাহাবিরা শোকে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন। বীরবাহু হযরত ওমর (রা.) পর্যন্ত তরবারি হাতে নিয়ে ঘোষণা করেন, যে বলবে হযরত মারা গেছেন, তার মাথা যাবে। এমন চরম বিশৃঙ্খল ও আবেগঘন মুহূর্তে হযরত আবুবকর (রা.) রুখে দাঁড়ান। তিনি হযরতের মানবিক পরিচয় ও আল্লাহর চিরস্থায়ী সত্তার কথা বলে সবাইকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনেন। তাঁর এই ভূমিকা ছাড়া সদ্য প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সমাজ হয়তো গভীর সংকটে পড়ত। তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, যা ইসলামের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করেছিল।
উদ্দীপকেও একই ধরনের চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামের প্রিয় নেতা করিম সাহেবের মৃত্যুতে তাঁর ছেলেসহ সবাই যখন শোকে বিহ্বল, তখন প্রবীণ সোবহান সাহেব তাদের শান্ত করেন। তিনি মৃত্যুর স্বাভাবিকতাকে মেনে নিয়ে প্রয়াত ব্যক্তির আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর এই নির্দেশনা শোকাহত গ্রামটিকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করে।
বস্তুত, উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নেতার মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা ও শোক একটি জাতিকে বা সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে পারে। এমন সংকটময় মুহূর্তে হযরত আবুবকর (রা.) ও সোবহান সাহেবের মতো ব্যক্তিত্বের যৌক্তিক ও স্থিতধীর নির্দেশনা সেই জাতিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে এবং নেতার রেখে যাওয়া আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য ও তাৎপর্যপূর্ণ।
No comments
Thank you, best of luck